পার্থর উপর শাস্তির খাঁড়া, মানিকে চুপ তৃণমূল! কেন?
পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়ের ফ্ল্যাট থেকে টাকা উদ্ধার হওয়ায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। কিন্তু মানিক ভট্টাচার্যের ক্ষেত্রে বিষয়টা এমন নয়।
প্রবীর চক্রবর্তী: এসএসসি দুর্নীতিতে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়কে ইডির গ্রেফতারির পর কালবিলম্ব করেনি তৃণমূল কংগ্রেস। প্রথমে তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণ করা হয়। তারপর তাঁকে দল থেকেও বরখাস্ত করা হয়। দুর্নীতির দায়ে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় অভিযুক্ত হতেই তাঁর উপর নেমে আসে শাস্তির খাঁড়া! কিন্তু সেই একই শিক্ষা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়েও মানিক ভট্টাচার্যের প্রতি এখনও কোনও কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি দল। পার্থর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও, প্রাইমারি টেট দুর্নীতিতে অভিযুক্ত মানিকের ক্ষেত্রে চুপ তৃণমূল। কেন? ইতিমধ্যেই সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
যে প্রসঙ্গে তৃণমূল সূত্রে খবর, পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের ঘর থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছিল। পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়ের ফ্ল্যাট থেকে টাকা উদ্ধার হওয়ায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। দলের ভাবমূর্তিতে তার আঁচ পড়েছে। দলের বিড়ম্বনা বেড়েছে এই ঘটনায়। কিন্তু মানিক ভট্টাচার্যের ক্ষেত্রে বিষয়টা এমন নয়। এক্ষেত্রে মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে ইডি ও সিবিআইকে। কারণ তাঁর বাড়ি থেকে কিছু পাওয়া যায়নি। মানিক দলের বিড়ম্বনার কারণ নয়। এমনটাই মনে করছে তৃণমূল। অন্যদিকে অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের যোগসাজশ ছিল। তাই পার্থর চট্টোপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিয়েছে। কারণ দল দুর্নীতি কোনওভাবেই মেনে নেবে না। কিন্তু মানিকের ক্ষেত্রে বিষয়টা অন্য। তাই মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে দল তাই কিছুটা সময় নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের অপসারণের আদেশের উপরে স্থাগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। কলকাতা হাইকোর্টের অপসারণের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন মানিক ভট্টাচার্য। কলকাতা হাইকোর্টের ওই কড়া রায়কে আমল দিল না সুপ্রিম কোর্ট। যদিও, মানিক ভট্টাচার্যের ইডি হেফাজত-ই বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত। প্রসঙ্গত, প্রাইমারি টেট কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে মানিক ভট্টাচার্যের। তাঁর বিরুদ্ধে প্রাইমারিতে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর আমলেই ৫৮ হাজার বেআইনি চাকরি হয়েছে। জুলাইয়ে মানিকের বাড়ি থেকে উদ্ধার নথিতেই লুকিয়ে রয়েছে সেই সমস্ত প্রমাণ।সূত্রের খবর, এমনটাই দাবি করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের। এমনকি মানিক ভট্টাচার্য বকলমে বহু টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট চালাতেন বলেও অভিযোগ।
অন্যদিকে, ইডি-র চার্জশিটে উল্লেখ, বেলঘরিয়ার ক্লাব টাউন ও টালিগঞ্জের ডায়মন্ড সিটির ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া কোটি কোটি টাকার মালিক পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়। অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় জেরায় জানিয়েছেন, 'উদ্ধার হওয়া ৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকার মালিক পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়। ৫ কোটি টাকার সোনার মালিকও পার্থ। নিরাপত্তার কথা ভেবে এতদিন তথ্য গোপন করেছিলাম। সব টাকা পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের। টাকার উৎস বলতে পারবেন পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ই।' শুধু টাকা-সোনার মালিকের নাম প্রকাশ্যে আসা-ই নয়, ইডি চার্জশিটে আরও জানিয়েছে যে অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়ের ৩১টি এলআইসি পলিসির বার্ষিক প্রিমিয়াম দেড় কোটি টাকা। তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, ৩১টির মধ্যে বেশিরভাগেরই বার্ষিক প্রিমিয়াম ৫০ হাজার টাকা। আর বাকিগুলির ৪৫ হাজার টাকা। পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের বাজেয়াপ্ত মোবাইল সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবটরিতে পাঠানো হয়েছিল। সেখানেই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার থেকে এলআইসি-র প্রিমিয়াম জমা দেওয়ার মেসেজ উদ্ধার হয়েছে।