জন্মাষ্টমীতে রাম মন্দির নির্মাণের দাবিতে বঙ্গে প্রথমবার ঝাঁপাতে চলেছে ভিএইচপি-বজরং
সুপ্রিম কোর্টে রাম মন্দির-বাবরি মসজিদ জমি বিতর্ক নিয়ে চলছে শুনানি।
অঞ্জন রায়
রাম মন্দির নিয়ে এবার দেশজুড়ে প্রচারে নামতে চলেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। বেনজিরভাবে এরাজ্যেও জোরদার প্রচারের নামার কৌশল নিয়েছে আরএসএস, ভিএইচপি ও বজরং দল। এর আগে বাংলায় রাম নামে তেমন সাড়া পড়েনি। কিন্তু পরপর ২ বছর রাম নবমী নিয়ে যে উত্সাহ চোখে পড়েছে, তাতে উজ্জীবিত ভিএইচপি। তাদের নেতৃত্ব মনে করছে, বাংলায় রাম নামেই হিন্দুত্বের ঝড় উঠবে। আর সে জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে জন্মাষ্টমীকে।
সুপ্রিম কোর্টে রাম মন্দির-বাবরি মসজিদ জমি বিতর্ক নিয়ে চলছে শুনানি। ১৩ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন স্থির করেছে সুপ্রিম কোর্ট। ইতিমধ্যেই দ্রুত শুনানির আবেদন করেছে ভিএইচপি। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুরেন্দ্র জৈনের কথায়, ''২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত মামলাটি স্থগিত করতে চাইছে বিরোধীরা। কিন্তু রাম মন্দির হিন্দুদের অধিকার। দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে সুপ্রিম কোর্টকে। ৫০০ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন হিন্দুরা। এবার অগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষার পর বিষয়টি সন্ত সমাজের উপরে ছেড়ে দেব। তারা যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই মেনে নেব।'' বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সূত্রে খবর, অগস্ট পর্যন্ত মামলার গতিপ্রকৃতির উপরে নজর রাখছে তারা। এর মধ্যে শুনানি না হলে দেশজুড়ে শুরু হবে আন্দোলন। জন্মাষ্টমী থেকে শুরু হবে রাম মন্দির নির্মাণের প্রচার। ধাপে ধাপে তার ধার বাড়ানো হবে।
রাম মন্দির নিয়ে গোবলয়ে আবেগ থাকলেও বাংলায় কস্মিনকালে তা সাড়া ফেলতে পারেনি। এমনকি বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময়েও এরাজ্যে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। যদিও করসেবকের মৃত্যুর ঘটনা দেখেছে কলকাতা। তবে রামের থেকে দূরত্ব রেখে চলেছিল শক্তির আরাধক বাঙালি। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বাংলাকে আর ব্রাত্য রাখতে চাইছে না বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দল। পরপর ২ বছর রাম নবমীতে স্পষ্ট, রাজ্যে গেরুয়া শক্তির উত্থান আর 'মিথ' নয়। যুব সমাজে শক্তি বিস্তার করতে পেরেছে ভিএইচপির যুব সংগঠন বজরং দলও। আরএসএস ও ভিএইচপি দাবি করেছে, আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে তাদের সদস্য সংখ্যা। ফলে বঙ্গে 'হিন্দুত্বে'র এই অনুকূল পরিবেশে রাম মন্দির আন্দোলনের হাওয়া তুলতে চাইছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।
জাতীয় রাজনীতিতে রাম মন্দিরের দাবিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এই আন্দোলন অবশ্য বিজেপির জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। কেন্দ্রে তাদের মতাদর্শের সরকার থাকা সত্ত্বেও কেন রাম মন্দির নির্মাণ হচ্ছে না, এই প্রশ্ন উঠেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অন্দরেই। অনেকেই বলছেন, রাম মন্দির নির্মাণকে আসলে ভোটের গাজর করে তুলে বিজেপি। ভোট আসলেই রাম মন্দিরের কথা মনে পড়ে বিজেপি নেতাদের। একথা অনস্বীকার্য, রাম মন্দির আন্দোলনের সৌজন্যেই ২ সাংসদের দল বিজেপি আজ মহীরূহতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সেই সরকারের আমলেই রাম মন্দির নির্মাণ ঝুলে রয়েছে, এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের একাংশ। এর মধ্যেই মোদীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করে ভিএইচপি ছেড়েছেন প্রবীণ তোগাড়িয়া। ফলে ভিএইচপি রাম মন্দির নিয়ে পথে নামলে 'শাঁখের করাতে' পড়তে চলেছে বিজেপি। সোচ্চারে বিরোধিতা করা যেমন সম্ভব নয়, তেমনই আবার আন্দোলনে যোগদান করলেও বিপত্তি।
রাজনৈতিক মহলের মতে, রাম মন্দির নিয়ে ভিএইচপি-র আন্দোলনে ফায়দাও হতে পারে বিজেপির। বলাইবাহুল্য, ২০১৯ সালের ভোটের আগে বাংলায় মেরুকরণ আরও তীব্র হবে। আর মেরুকরণ যত তীব্র ততই লাভ বিজেপি। তবে একটা কথা আগাম বলাই যায়, বঙ্গের রাজনীতির মঞ্চে আরও জোরালোভাবে প্রকট হতে চলেছেন অযোধ্যার 'রঘুকূলপতি'।
আরও পড়ুন- চন্দনের টিপ পরায় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে বহিষ্কার মাদ্রাসার