ব্যানার-ফ্লেক্সে ঠাঁই নেই জীবিতের, নির্দেশ মাদ্রাজ হাইকোর্টের
নিজস্ব প্রতিবেদন: কোনও জীবিত ব্যক্তির ছবি-সহ ব্যানার, ফ্লেক্সবোর্ড, সাইনবোর্ড ইত্যাদি ঝোলানো যাবে না প্রকাশ্যে, স্পষ্ট জানিয়ে দিল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। তামিলনাড়ুর মুখ্যসচিবকে বিচারপতি এস বিদ্যানাথনের নির্দেশ, "রাজ্যের কোথাও এমন কোনও ছবি টাঙানো না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে আপনাকে। এমনকি জীবিত বিজ্ঞাপনদাতার ছবিও ছাপা যাবে না বিজ্ঞাপনে।
কিন্তু হঠাত্ কেন এমন নির্দেশ?
রানি আন্না নগরের বাসিন্দা জনৈক বি থিরুলোচনা কুমারীর আবেদনের ভিত্তিতেই এদিন এমন রায় দিয়েছে মাদ্রাজ হাইকোর্ট। আবেদনকারীর অভিযোগ, মাথি নামক এক ব্যক্তি তাঁর জমির সামনে একটি দলীয় পতাকা লাগিয়ে দেয়। কিন্তু থিরুলোচনা এর প্রতিবাদ করলে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলটির প্রতিনিধিরা তাঁকে শাসায়। এরপর তিনি চেন্নাই পুরনিগম এবং পুলিসের কাছে অভিযোগ জানালেও তারা কোনও পদক্ষেপ করেনি। পরবর্তীকালে পতাকাটি সরিয়ে নেওয়া হলেও ওই একই জায়গায় রাজনৈতিক দলেরই আরেকটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগ, এই ঘটনার পর থিরুলোচনা কুমারী আরুমবাক্কাম থানায় অভিযোগ করতে গেলে উল্টে তাঁকেই মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখান পুলিশকর্মীরা। এরপর সরাসরি আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। আদালত বি থিরুলোচনা কুমারীর সম্পত্তি থেকে ওইসব প্রচারমূলক সাইনবোর্ড তত্ক্ষণাত্ খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এরপরই সার্বিকভাবে কোনও জীবিত ব্যক্তির ছবি সংবলিত ব্যানার, ফ্লেক্সবোর্ড, সাইনবোর্ড ইত্যাদি ঝোলানো যাবে না বলে নির্দেশ দেন বিচারপতি।
উল্লেখ্য, অতীতে খবরের কাগজে নেতা-মন্ত্রীদের ছবি ছেপে বিভিন্ন প্রকল্প সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন প্রকাশের উপর রাশ টেনেছিল সুপ্রিম কোর্ট। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের প্রধান বিচারপতিদের এই নিষেধাজ্ঞার আওতা থেকে ছাড় দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। পরবর্তীকালে অবশ্য সেই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্যও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল বেশ কিছু রাজ্য প্রশাসন। থেকে তবে এদিনের রায় নিয়ে তামিলনাড়ুর বিভিন্ন মহলে ইতিমধ্যেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আদালতের রায়ে ব্যানার, ফ্লেক্সবোর্ড, সাইনবোর্ডের উল্লেখ থাকলেও পোস্টারের কথা বলা হয়নি। সেক্ষেত্রে অনেকেই জানতে চাইছেন, পোস্টার কি তাহলে ছাড় পেল? প্রশ্ন উঠছে, ব্যবসায়িক সংস্থার বিজ্ঞাপনী প্রচারে ব্যবহৃত ছবির ক্ষেত্রেই বা কী হবে?
এদিকে, হাইকোর্টের এই নির্দেশে মাথায় হাত ব্যক্তি পূজায় অভ্যস্ত তামিল রাজনীতির কারবারিদের। তবে শুধু তামিল রাজনীতিকরাই নন, প্রমাদ গুনছে দেশের তামাম রাজনৈতিক মহলও। এই রায়ের ফলে রাজনৈতিক দলগুলির বিশাল ব্যানার-ফ্লেক্সের মাধ্যমে ব্যক্তিকে দেবত্বে উত্তীর্ণ করার চেষ্টা ধাক্কা খাবে বলে মনে করছে ওয়াকিফহাল মহল। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপিতেও এই মুহূর্তে সর্বদা আলোকবৃত্তে থাকেন মোদী-শাহ জুটি। কংগ্রেসর ক্ষেত্রেও রাহুল-সোনিয়া। তাই দলমত নির্বিশেষে এই রায় অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে গোটা দেশের রাজনীতির কারবারিদের কাছেই।