অন্তর্দ্বন্দ্ব এড়াতে ফের রামমন্দিরে ফিরল বিজেপি
ভোট বড় বালাই! আর তাই জোট রাজনীতির দুর্বহ বাধ্যবাধকতা অতিক্রম করেই ফের হিন্দুত্বের লাইনে ফিরতে চলেছে বিজেপি! উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটের জন্য দলের তরফে শুক্রবার যে নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে সরাসরি অযোধ্যোয় রামমন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন গডকড়িরা।
ভোট বড় বালাই! আর তাই জোট রাজনীতির দুর্বহ বাধ্যবাধকতা অতিক্রম করেই ফের হিন্দুত্বের লাইনে ফিরতে চলেছে বিজেপি! উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটের জন্য দলের তরফে শুক্রবার যে নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে সরাসরি অযোধ্যোয় রামমন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয়েছেন গডকড়িরা। বিজেপির এই ইস্তেহারে নয়ের দশকের গোড়ার 'রাম-রুটি-ইনসাফ'-এর ছায়া একেবারে স্পষ্ট বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
উত্তরপ্রদেশের কোনও নেতা নন, এদিন গোবলয়ের হৃদয়পুরের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ইস্তেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণীর প্রাক্তন রাজনৈতিক সচিব সুধীন্দ্র কুলকার্ণি। মুম্বই আইআইটি'র এই প্রাক্তনী দলের অন্দরমহলে তেমন কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত নন। বরং ২০০৮ সালে লোকসভার আস্থা ভোটে ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ-সহ বেশ কিছু বিতর্ক রয়েছে তাঁকে ঘিরে। গত বছর আস্থা-ঘুষ কাণ্ডের জেরে জেলেও যেতে হয়েছিল তাঁকে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, অপেক্ষাকৃত নরমপন্থী হিসেবে পরিচিত সুধীন্দ্র কুলকার্ণিকে মাধ্যমে সরযূ নদীর তীরে রামমন্দির প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার আসলে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক সংহত করার পাশাপাশি দলের ঐক্যবদ্ধ চেহারাটা তুলে ধরার মরিয়া প্রয়াস।
আরএসএস-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে ইতিমধ্যেই দলের একাংশের সমালোচনার লক্ষ্য হয়েছেন বিজেপি সভাপতি নীতিন গডকড়ি। এই পরিস্থিতিতে দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়ে মনমোহন সিংহের সরকারের সমালোচনা বা লখনউ-এর মসনদ দখল করলে নামমাত্র মূল্য ল্যাপটপ ও গরিব পরিবারপিছু বিনামূল্যে একটি করে গরু দেওয়া আর কড়া লোকায়ুক্ত বিল প্রণয়নের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি আডবাণী-ঘনিষ্ঠ সুধীন্দ্র কুলকার্নির মতো নেতাকে সামনে রেখে সুকৌশলে গেরুয়া শিবিরের `মন্দির ওহি বানায়েঙ্গে` স্লোগানটিকেও নির্বাচনী ইস্তেহারের অন্তর্ভুক্ত করালেন তিনি।
এক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশের এবার বিধানসভা ভোটে জোট রাজনীতির প্রেক্ষাপটও গডকড়ি শিবিরের পক্ষে কাজ করেছে। এবার এনডিএ শরিক জনতা দল (ইউনাইটেড)-কে দূরে ঠেলে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটে একক শক্তিতে লড়তে নেমেছে বিজেপি। তাই তথাকথিত `ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচি` রূপায়ণের কোনও দায়বদ্ধতা নেই পদ্ম-ব্রিগেডের। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে সিকি শতকের পুরনো রামমন্দির প্রসঙ্গকে ফের সামনে আনার এই কৌশলকে বিজেপি`র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের `লিটমাস টেস্ট` হিসেবেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে জোট সরকার গঠনের সময় অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা লোপ বা অভিন্ন দেওয়ানী বিধির মতো বিতর্কিত ইস্যুগুলি ঠাণ্ডাঘরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি শীর্ষনেতৃত্ব। সে সময় সঙ্ঘ পরিবারের অন্দরমহলে বিষয়টি নিয়ে জল ঘোলা হয়েছিল বিস্তর। নাগপুরের আরএসএস সদর দফতরের নীতি নির্ধারকরা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটের মুখে বিভিন্ন ইস্যুতে যথেষ্ট চাপে রয়েছেন গডকড়ি। নানা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত নরেন্দ্র মোদী-বিরোধী নেতা সঞ্জয় যোশিকে বিধানসভা ভোটের দায়িত্ব দেওয়া, উমা ভারতীকে দলে ফিরিয়ে মধ্যপ্রদেশ থেকে তুলে এনে প্রার্থী করা, বাবু সিং কুশওয়া-বাদশা সিংয়ের মতো মায়াবতী মন্ত্রিসভার বিতাড়িত দাগিদের দলে নেওয়ার মতো বিষয়গুলি নিয়ে দলের অন্দরমহলে যথেষ্ট টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে মুখতার আব্বাস নাকভি, উমা ভারতী সূর্যপ্রসাদ শাহীদের এক মঞ্চে এনে নতুন করে রামমন্দির নির্মাণের কথা বলে দলের ঐক্যবদ্ধ চেহারা তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছে ১১ অশোক রোড। যদিও তাঁরা ভালভাবেই জানেন, সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন অযোধ্যার বিতর্কিত জমি মামলার সমাধান এত তাড়াতাড়ি হওয়ার নয়।