টিম আন্নার প্রস্তাবিত লোকপাল বিলের সঙ্গে সরকারের চূড়ান্ত বিলের পার্থক্য স্পষ্ট, বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না জনলোকপালের
দু-বছর আগে রামলীলা ময়দানে বসে জনলোকপাল বিলের খসড়া তৈরি করেছিল টিম-আন্না। এবার সরকার লোকপাল বিলের চূড়ান্ত রূপ রাজ্যসভায় পেশ করেছে। তবে বিতর্ক লোকপালের সঙ্গ ছাড়ছে না। টিম আন্না প্রস্তাবিত এবং সরকারের পেশ করা বিলের মধ্যে তফাত্ই এই বিতর্কের কেন্দ্রে। কেন্দ্রকে পাঠানো টিম আন্নার লোকপাল বিলের খসড়া এবং কেন্দ্রের পেশ করা বিল, দুইয়ের মধ্যে তফাত্ বিস্তর। শুক্রবার লোকপাল বিল রাজ্যসভায় পেশ হওয়ার পর সেই প্রশ্নেই আবারও বিতর্ক শুরু হয়েছে। আন্না হাজারেদের তথাকথিত জন লোকপাল বিল এবং সরকারি বিলের মধ্যে ফারাকের অন্যতম হল লোকপালে প্রধানমন্ত্রীর অন্তর্ভুক্তি ইস্যু।
দু-বছর আগে রামলীলা ময়দানে বসে জনলোকপাল বিলের খসড়া তৈরি করেছিল টিম-আন্না। এবার সরকার লোকপাল বিলের চূড়ান্ত রূপ রাজ্যসভায় পেশ করেছে। তবে বিতর্ক লোকপালের সঙ্গ ছাড়ছে না। টিম আন্না প্রস্তাবিত এবং সরকারের পেশ করা বিলের মধ্যে তফাত্ই এই বিতর্কের কেন্দ্রে। কেন্দ্রকে পাঠানো টিম আন্নার লোকপাল বিলের খসড়া এবং কেন্দ্রের পেশ করা বিল, দুইয়ের মধ্যে তফাত্ বিস্তর। শুক্রবার লোকপাল বিল রাজ্যসভায় পেশ হওয়ার পর সেই প্রশ্নেই আবারও বিতর্ক শুরু হয়েছে।
আন্না হাজারেদের তথাকথিত জন লোকপাল বিল এবং সরকারি বিলের মধ্যে ফারাকের অন্যতম হল লোকপালে প্রধানমন্ত্রীর অন্তর্ভুক্তি ইস্যু।
টিম আন্নার প্রস্তাব অনুযায়ী,
(1) সাত সদস্যের লোকপাল বেঞ্চের অনুমতি পেলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও তদন্ত করা যাবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে থাকাকালীন কারোর বিরুদ্ধে তদন্তের অনুমতি নেই পেশ হওয়া বিলে। অবসর গ্রহণের পরই সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত করা যাবে।
(2) দুর্নীতির প্রশ্নে উচ্চ আদালতের বিচারপতি বা বিচারকদের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার লোকপালের হাতে থাকবে। প্রস্তাব ছিল আন্নাবাহিনীর। তাঁদের দাবি ছিল, প্রধানমন্ত্রীর মতোই বিচারপতিদের ক্ষেত্রেও সাত সদস্যের লোকপাল বেঞ্চের অনুমতি পেলে তদন্ত করা যাবে।
কিন্তু কেন্দ্রের পেশ করা বিল অনুসারে, উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের লোকপালের অন্তর্ভুক্ত না করে আলাদা জুডিশিয়াল অ্যাকাউন্টিবিলিটি বিল আনার প্রস্তাব রয়েছে।
(3) সিবিআইয়ের দুর্নীতি বিরোধী শাখাকে লোকপালের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব ছিল আন্নাবাহিনীর খসড়ায়।
তবে সংসদে পেশ হওয়া বিলে সরকারি তা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দুটিকে কখনই এক করা সম্ভব নয়।
(4) লোকপালের সদস্যদের বিরুদ্ধেই কোনও অভিযোগ উঠলে, এবং সেক্ষেত্রে তাঁদের সরানোর প্রশ্নে টিম আন্নার বক্তব্য ছিল, যে কেউই সুপ্রিম কোর্টে এনিয়ে অভিযোগ করতে পারেন। সর্বোচ্চ আদালত এরপর রাষ্ট্রপতির কাছে ওই সদস্যকে সরানোর প্রস্তাব দিতে পারবে।
তবে পেশ হওয়া বিলে বলা হয়েছে, অভিযোগকারী রাষ্ট্রপতির কাছে নিজের বক্তব্য জানাবেন এবং সেইমতো রাষ্ট্রপতি তা পাঠিয়ে দিতে পারেন দেশের প্রধান বিচারপতির কাছে।
(5) হুইসলব্লোয়ার বা দুর্নীতির ঘটনা যিনি প্রথম জনসমক্ষে আনবেন, তাঁর সুরক্ষার দায় লোকপালের। এমনটাই খসড়ায় প্রস্তাব ছিল টিম আন্নার।
তবে কেন্দ্রের সংশোধিত বিলে বলা হয়েছে, হুইসলব্লোয়ার বা প্রথম অভিযোগকারীর সুরক্ষার দায়ভার লোকপালের নয়।
(6) শাস্তিপ্রসঙ্গে আন্না, কেজরিওয়ালদের প্রস্তাব ছিল, লোকপাল সরাসরি শাস্তি বিধান করতে পারবে। শাস্তি হতে পারে জেল, পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত। অথবা তারা শাস্তির ভার দিয়ে দিতে পারে আদালতকে।
কিন্তু পেশ হওয়া বিল অনুযায়ী, লোকপালের কোনও শাস্তি দেওয়ার অধিকার থাকবে না। একমাত্র আদালতই পারবে শাস্তি বিধান করতে। শাস্তি কি কি হতে পারে, তা অবশ্য এক রয়েছে দুক্ষেত্রেই।
দেখা যাচ্ছে, প্রায় সবকটি ইস্যুতে কিছু না কিছু হেরফের রয়েছে টিম আন্না প্রস্তাবিত এবং সংসদে পেশ হওয়ার বিলের মধ্যে। প্রশ্ন উঠেছে, এই পরিবর্তিত বিল কতটা মেনে নেবেন আন্না-কেজরিওয়াল-প্রশান্ত ভূষণরা?