নাগরিকপঞ্জী নিয়ে শ্যাম ও কূল রাখার চেষ্টায় অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ
নাগরিকপঞ্জী নিয়ে শাঁখের করাতে কংগ্রেস।
কমলিকা সেনগুপ্ত
নাগরিকপঞ্জী নিয়ে শাঁখের করাতে কংগ্রেস। সমস্বরে বিরোধিতা করাও সম্ভব নয়, আবার নাগরিকপঞ্জীর পক্ষে দাঁড়ালে সংখ্যালঘু ভোটও হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা- এই প্রেক্ষাপটে শ্যাম ও কূল দুই-ই রাখার চেষ্টায় অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। তিনি মনে করিয়ে দিলেন, নাগরিকপঞ্জীর ভাবনা আসলে কংগ্রেসের। তবে বিরোধিতা কেন? প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ''নাগরিকপঞ্জী আমাদের সন্তান। সেটা নিয়ে বিরোধিতা করছি না। আমরা সরকারকে বলছি, সঠিক তথ্য প্রকাশ করুন। এই নাগরিকপঞ্জী ভুলে ভরা''।
তরুণ গগৈয়ের কথায়, নাগরিকপঞ্জীর চূড়ান্ত খসড়া গলদে ভরা। আমরা বলছি, সঠিক নাগরিকপঞ্জী প্রকাশ করুন। ৪০ লক্ষ লোকের নাম তালিকায় নেই। তাঁদের মধ্যে বহু মানুষ ভারতীয় নাগরিক। প্রয়োজনীয় নথিও রয়েছে তাঁদের কাছে। কয়েকজন বিধায়কও রয়েছেন। ভারতীয় নাগরিকরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন।
অসমে 'বাঙালি খেদাও' নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবারই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, নাম, পদবী দেখে চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করা হয়েছে। দেশজুড়ে অস্থিরতা তৈরি করছে বিজেপি। এর ফলে লাগতে পারে গৃহযুদ্ধ। এদিন দশ জনপথে সনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ''৪০ লক্ষ মানুষের নাম না থাকাই উদ্বেগের''। অসমে দলের সাংসদদের পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি নিজে যাওয়ার কথাও বলেছেন। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছে অসমের কংগ্রেস নেতৃত্ব। তরুণ গগৈ বলেন, ''আমি কাউকে আসতে বারণ করছি না। কাউকে স্বাগতও জানাচ্ছি না। প্রকৃত ভোটারদের যে কেউ সহায়তা করতে পারেন''।
নাগরিকপঞ্জী নিয়ে অহমীয়াদের ভাবাবেগের বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হচ্ছে কংগ্রেসকে। অসমে মমতার সংগঠন নেই, ফলে অলআউট আক্রমণে তাঁর লোকসানের কোনও সম্ভাবনা নেই বলে মত রাজনৈতিক মহলের। অনেকেই মনে করছেন, নাগরিকপঞ্জীর সরাসরি বিরোধিতা করলে ২০১৯ সালে অসমে ধাক্কা খেতে হবে কংগ্রেসকে। নাগরিকপঞ্জীর সমর্থন দেওয়া মানে বিজেপির পাশে দাঁড়ানো। প্রশ্ন উঠছে, কেন নাগরিকপঞ্জী নিয়ে ১৫ বছরের শাসনে উদ্যোগ নেয়নি কংগ্রেস। এর পাশাপাশি সংখ্যালঘু ভোট হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হবে। ফলে আপাতত মধ্যপন্থার রাস্তাতেই হাঁটছে রাহুল গান্ধীর দল। তার আভাস মিলেছে তরুণ গগৈয়ের কথাতেই। সে জন্য নাগরিকপঞ্জীর সরাসরি বিরোধিতা না করে ভুল তথ্যের উপরেই জোর দিচ্ছেন তিনি।
উল্লেখ্য, নাগরিকপঞ্জী প্রকাশের পর অহমীয়াদের মধ্যে খুশির রেশ। দীর্ঘদিন ধরে সে রাজ্যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের অভিযোগে নাগরিকপঞ্জী প্রকাশের দাবি উঠেছিল। ২০১৬ সালে নাগরিকপঞ্জী প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতা দখল করেছিল বিজেপি।
আরও পড়ুন- মোদীকে ঠেকাতে সনিয়া-রাহুলের সঙ্গে জোট-কথা মমতার