কেন হঠাত্ সুর নরম দীনেশের?
১৪ থেকে ১৮ মার্চ। কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে প্রবল টানাপোড়েন, তুমুল আলোড়ন ফেলে হঠাত্ই ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিলেন দীনেশ ত্রিবেদী। তাঁর সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যেই একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
১৪ থেকে ১৮ মার্চ। কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে প্রবল টানাপোড়েন, তুমুল আলোড়ন ফেলে হঠাত্ই ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিলেন দীনেশ ত্রিবেদী। তাঁর সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যেই একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই ক`দিনে কখনও দলের থেকে দেশকে বড় করে দেখিয়েছেন দীনেশ ত্রিবেদী। কখনও ইস্তফার জন্য নেত্রীর লিখিত নির্দেশ দাবি করেছেন। কিন্তু হঠাত্ নেত্রীকে ফোন করে ইস্তফার কথা কেন জানালেন তিনি ? কোন চাপে ? কার চাপে?
রেল বাজেটে যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই তুমুল আলোড়ন পড়ে যায় কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার এবং দীনেশ ত্রিবেদীকে অপসারণের দাবি জানায় তৃণমূল। মুকুল রায়কে পরবর্তী রেলমন্ত্রী করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়ে শুরু হয় জল্পনা। লোকসভায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন রেলমন্ত্রীকে ইস্তফা দিতে বলা হয়নি। আবার লোকসভার বাইরে জানান, মুকুল রায়কে রেলমন্ত্রী করা হচ্ছে। এরপরও নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন দীনেশ ত্রিবেদী। তিনি জানান, দলের চেয়ে দেশের স্বার্থ তাঁর কাছে আগে নেত্রীর লিখিত নির্দেশ ছাড়া ইস্তফা দেবেন না। এরপর লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করে পদত্যাগ করতে বলেন রেলমন্ত্রীকে। দলের প্রবল চাপের সামনেও দমে যাননি দীনেশ ত্রিবেদী।
রবিবার দুপুরেই জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী না বললে ইস্তফা দেওয়ার প্রশ্নই নেই। অথচ বিকেলের পরই দ্রুত পট পরিবর্তন। দিল্লি যাওয়ার কথা জানান তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই জানা যায় রেলমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে তাঁর। এবং ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন রেলমন্ত্রী। কিন্তু কেন হঠাত্ই ইস্তফা দিতে রাজি হলেন দীনেশ ত্রিবেদী?
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা গোটা ঘটনায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। উঠে আসছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নামও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেছিলেন, রেলের যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি কংগ্রেসের `প্রি-প্ল্যানড্`। তাঁর অভিযোগের লক্ষ্য ছিলেন প্রণববাবুই। কারণ রেল বাজেটের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। দিল্লির রাজনৈতিক মহলের মতে, দীনেশের সরে যাওয়ার পিছনে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকাই রয়েছে। কেন এই ভূমিকা পালন করলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়? আসলে তিনি চাপ সৃষ্টি করতে চেষ্টা করেছিলেন তৃণমূলের ওপর। কিন্তু তৃণমূলের সমর্থন যখন হাতছাড়া হওয়ার জায়গায়, তখনই কৌশলী পদক্ষেপ নিলেন ইউপিএ-র `ক্রাইসিস ম্যানেজার`। দিল্লির রাজনৈতিক মহলের মতে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কৌশলী পদক্ষেপে যে টানাপোড়েনের হঠাত্ সমাপ্তি ঘটল, তাকে শেষ না বলে বরং `শেষের শুরু` বলা যেতে পারে।