'মৃত' তারকা অলিম্পিয়ান এখন লাহোরের রাস্তায় অটো চালান

বড় করে তাঁর ছবি ছাপা হত সংবাদপত্রে। মহম্মদ আশিক ছিলেন এমনই এক সফল ক্রীড়াবিদ। ১৯৬০ রোম ও ১৯৬৪ টোকিও অলিম্পিকে পাকিস্তানের হয়ে সাইকেলিংয়ে খেলতে নেমেছিলেন। পাকিস্তান থেকে তো আর অনেক ক্রীড়াবিদ অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা পান না, কিন্তু আশিক পেরেছিলেন। পদক না জিতলেও আশিকের সাইকেলিংয়ের প্রশংসা করেছিলেন সবাই। সে আশিক এখন ভাগ্যের ফেরে অটো চালান। আর মজার কথা হল আশিককে এখন তার দেশ ভুলে তো গেছেই, সম্প্রতি এক পাক সংবাদপত্রে লেখা হয় প্রাক্তন অলিম্পিয়ান আশিক নাকি  অনেক দিন মারা গিয়েছেন। আশিক সেই রিপোর্ট দেখিয়ে হাসেন। হেসে বলেন, 'ওরা তো ঠিকই বলছে ক্রীড়াবিদ আশিককে তো ওরা মেরেই ফেলেছে। যে আশিক বেঁচে আছে সে শুধু শ্বাস নিচ্ছে।'

Updated By: Aug 3, 2016, 02:46 PM IST
'মৃত' তারকা অলিম্পিয়ান এখন লাহোরের রাস্তায় অটো চালান

পার্থ প্রতিম চন্দ্র: বড় করে তাঁর ছবি ছাপা হত সংবাদপত্রে। মহম্মদ আশিক ছিলেন এমনই এক সফল ক্রীড়াবিদ। ১৯৬০ রোম ও ১৯৬৪ টোকিও অলিম্পিকে পাকিস্তানের হয়ে সাইকেলিংয়ে খেলতে নেমেছিলেন। পাকিস্তান থেকে তো আর অনেক ক্রীড়াবিদ অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা পান না, কিন্তু আশিক পেরেছিলেন। পদক না জিতলেও আশিকের সাইকেলিংয়ের প্রশংসা করেছিলেন সবাই। সে আশিক এখন ভাগ্যের ফেরে অটো চালান। আর মজার কথা হল আশিককে এখন তার দেশ ভুলে তো গেছেই, সম্প্রতি এক পাক সংবাদপত্রে লেখা হয় প্রাক্তন অলিম্পিয়ান আশিক নাকি  অনেক দিন মারা গিয়েছেন। আশিক সেই রিপোর্ট দেখিয়ে হাসেন। হেসে বলেন, 'ওরা তো ঠিকই বলছে ক্রীড়াবিদ আশিককে তো ওরা মেরেই ফেলেছে। যে আশিক বেঁচে আছে সে শুধু শ্বাস নিচ্ছে।'

বক্সিং দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন, কিন্তু চোট লাগার পর স্ত্রী-এর অনুরোধ রাখতে বক্সিংয়ে ছেড়ে নেমে পড়েন সাইকেলিংয়ে। সেখানে আসে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাফল্য। সাতের দশকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে পুরস্কৃত করার সময় বলেছিলেন, আশিক হলেন দেশের হিরো।

পাকিস্তানের সেই 'ফরগটেন হিরো' আশিক এখন লাহোরের রাস্তায় অটো চালান। অটোয় আগে তাঁর জেতা বিভিন্ন পদক সাজিয়ে রাখতেন। এখন আর সেসব করেন না। তবে অটোটা সাজানো তাঁর খেলাধুলো জীবনের বিভিন্ন মুহূর্ত নিয়ে। অটোর পাশে আছে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার নেওয়ার ছবিও।

অটোতে সওয়ারি হলে যাত্রীদের তাঁর জীবনের গল্প বলেন। অনেকেই অবিশ্বাস করেন। আশিক বলেন, 'ওরা ঠিকই করে আমার নিজেরই নিজের জীবনটাকেই ঠিক মত বিশ্বাস হয় না।'খেলা ছাড়ার পর ১৯৭৭ সাল অবধি একটা বেসরকারী সংস্থায় জনসংযোগ দফতরে চাকরি করতেন। শরীর খারাপের পর চাকরিটা যায়। তারপর ট্যাক্সি চালান। সেটাতে মন টেকেনি। করেন ছোটখাটো ব্যবসা। সেখানে লাভ না আসায় পেটের দায়ে একেবারে অটো চালাতে শুরু করেন। গত ৬ বছর ধরে এই কাজটাই করেন। মাঝেমাঝেই বলেন এক মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেই বিখ্যাত উক্তি। 'যে দেশ তার হিরোদের ভুলে যায়, তারা কোনওদিনই উন্নতি করতে পারে না।'স্ত্রী-ও বলেছিলেন, 'যারা তোমায় ভুলে যায়, তুমিও তাদের ভুলে যাও।' 

স্ত্রী মারা গিয়েছেন, চার সন্তানের কেউই তার সঙ্গে থাকে না। নি:সঙ্গ জীবনযুদ্ধটা এবার শেষ হলে বাঁচেন বলে জানালেন। তবে যতদিন সেটা না হচ্ছে অটো চালাতেই হবে। অটো নিয়ে এগিয়ে চলেন আশিক। শোনা যায় বলছেন, দাদা আসুন আসুন আগে পৌঁছে দেবো।' সত্যি ফাইটার বোধহয় একেও বলে।

.