'মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত শোভনবাবুর নিজের, বৈশাখীর হাত নেই'
দেখুন মনোজিত্ মণ্ডলের একান্ত সাক্ষাত্কার...
!['মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত শোভনবাবুর নিজের, বৈশাখীর হাত নেই' 'মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত শোভনবাবুর নিজের, বৈশাখীর হাত নেই'](https://bengali.cdn.zeenews.com/bengali/sites/default/files/2018/11/21/157050-manojeet.jpg)
সচারু মিত্র: সংবাদমাধ্যমে স্ত্রী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কাঁটাছেঁড়া। মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক কেরিয়ারের পতনের জন্য তাঁর স্ত্রীকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে জি ২৪ ঘণ্টার কাছে একান্ত প্রতিক্রিয়ায় স্ত্রীর পাশেই দাঁড়ালেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বামী মনোজিত্ মণ্ডল। উড়িয়ে পরকীয়া-তত্ত্ব। জানিয়ে দিলেন, ‘বৈশাখীর পাশে ছিলাম, আছি, থাকব।’ দেখুন মনোজিত্ মণ্ডলের একান্ত সাক্ষাত্কার...
সুচারু: রত্নাদেবী তাঁর দাম্পত্য জীবন ভাঙার পিছনে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত রয়েছে বলেছেন, আপনার কী মত?
মনোজিত্ মণ্ডল
বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা ফাইল করেছেন কে করেছেন? বলুন কে করেছেন? শোভনবাবু তো। রত্নাদেবীর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ রয়েছে শোভনবাবুর, সেখানে কী শোভনবাবু কখনও বলেছেন বৈশাখীর কারণেই আমি রত্নার সঙ্গে বিচ্ছেদ চাই। শোভনবাবু যা যা বিষয় আদালতে দেখিয়েছেন, সেখানে এই বিষয়টি নেই। রত্নাদেবীর বিরুদ্ধে শোভনবাবুর কিছু অভিযোগ রয়েছে এবং সেগুলির সারবত্তা রয়েছে বলেই আদালত তা গ্রহণ করেছে। এমনি এমনি তো ২২ বছরের দাম্পত্য জীবন শেষ হয়ে যেতে পারে না।
সুচারু: বৈশাখী এমন কিছু করেছেন, যে বাড়িতে আটকে রাখছেন, শোভনবাবুর ওপর তুকতাক করেছেন
মনোজিত্ মণ্ডল
বছর খানেক আগে শোভনবাবু একটি খারাপ অবস্থায় পড়েছিলেন। তখন থেকেই ওঁদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ। আমি ও আমার স্ত্রী ওঁদের পাশে ছিলাম।
সুচারু: শোভনবাবুর রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষ হওয়ার পিছনে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করছেন রত্না চট্টোপাধ্যায়?
মনোজিত্ মণ্ডল
এই বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। এটা আপনারাই বলুন, এরকমটা কী হতে পারে? একজন মহিলার জন্য সত্যিই কি এক জন রাজনীতিকের রাজনৈতিক জীবন কোট আনকোট শেষ হয়ে যেতে পারে? এই বিষয়টা একটা শ্রেণির লোক খাচ্ছে, তাই তো আপনারা (সাংবাদিকরা) দেখাচ্ছেন। তো আপনারাও (সাংবাদিকরা) বেশ চটপটে করে দেখাচ্ছেন...আপনাদের ওই যে কী বলে না...খবর খাওয়ানো আর কী! এই বিষয়টাও তো আপনারা (সাংবাদিকরা) সেইভাবে দেখাচ্ছেন। এই বিষয়টা আপনাদেরও আমি ভেবে দেখতে বলবো! এটা কী কখনও হতে পারে?
৩৫ বছর ধরে যে মানুষটা রাজনীতি করেছেন, সেই মানুষটা আজকে যখন মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন, তখন বলা হচ্ছে একজন মহিলার জন্য এমনটা হচ্ছে! ঘটনাচক্রে এই ঘটনায় শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বদলে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে বেশি কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে। আমি বলব, এটাও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের একটি লক্ষ্ণণ। এটা ঠিক নয়। বৈশাখী আমার স্ত্রী, এই বিষয়টা যদি বাদও দেন, আমি একজন মানুষ হিসাবে বৈশাখীর পাশে দাঁড়াব। শোভনবাবুর যদি রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে, বা উনি যদি নিজের রাজনৈতিক জীবন শেষ করে দিতে চান, সেটা ওঁর ব্যাপার। এখানে বৈশাখীর ভূমিকা নিয়ে যেভাব কাদা ছোড়াছুড়ি করা হচ্ছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে কলকাতার সমাজ কতদূর এগিয়েছে।
সুচারু: বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকবেন এখনও?
মনোজিত্ মণ্ডল
নিশ্চয়ই, আমাদের সঙ্গে তো শোভনবাবুর পারিবারিক সম্পর্ক। এটা নিয়ে তো কোনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। আমি তো নিজে ওঁর সঙ্গে ঘুরেছি অনেকদিন। গত এক বছর ধরে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, এখনও যাচ্ছেন। উনি খুবই অসুস্থ। আমি আজকেও ওঁর সঙ্গে দেখা করেছি। ওঁর বাড়িতে গিয়েছি। আমি আমার মেয়েকেই ওঁর কাছে রেখে এসেছি। দুর্ভাগ্য এটার সঙ্গে রাজনীতি জড়ানো হচ্ছে। এই প্রশ্নগুলোই দুর্ভাগ্যজনক। আমি বাদ দিলাম দলের কথা। আমি যখন অসুস্থ ছিলাম, তখনও ওঁ এসেছিলেন আমাকে দেখতে। এটা তো মানবিকতা।
সুচারু: রত্না চট্টোপাধ্যায় আরও একটি অভিযোগ করেছেন , পরকীয়ার অভিযোগ করেছেন, আপনার কাছে প্রশ্নটা অপ্রিয় হতে পারে, তবুও করলাম
মনোজিত্ মণ্ডল
না না, আমার কাছে এই প্রশ্নটা আর অপ্রিয় নেই। গত এক বছর ধরে এটাই শুনে আসছি। কেউ বলে গভীর বন্ধুত্ব, কেউ বলেন পরকীয়া। আপনারা কখনও সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সেলিব্রেট করেন, কখনও আবার এসবকে পরকীয়া বলেন! আসলে আমাদের সমাজটাই এখনও হিপোক্রিসির মধ্যে দিয়ে চলে। আপনারা যে যে গল্প ছড়িয়ে রেখেছেন, তা না হলে এগুলো হয়তো হত না।
সুচারু: রত্না চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, বৈশাখীকে সামনে পেলে চড় মারবেন, ওঁ (বৈশাখী) অনেকের ঘর ভেঙেছেন...
মনোজিত্ মণ্ডল
এসব বেআইনি কথাবার্তার তো কোনও উত্তর হয় না। আমি তো আর বেআইনি কোনও কথার উত্তর দেব না। উনি(রত্না) চড় মারলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এনিয়ে আর কী উত্তর দেব।
সুচারু: এরপরেও আপনি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকবেন, তাঁকে সমর্থন করবেন?
মনোজিত্ মণ্ডল
আমরা পাশে আছি তো, এর মধ্যে তো কোনও ঢাক-গুরগুর নেই। আমরা শোভনদার সঙ্গেও সম্পর্ক রাখব।
সুচারু: রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও শোভনবাবুর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বিক্ষুব্ধ, তাঁকে বকাঝকাও করেছেন, আপনি কী বলবেন?
মনোজিত্ মণ্ডল
আমি এগুলো বিশ্বাস করি না। ওঁদের ব্যক্তিগত জীবনে বৈশাখীর কোনও ভূমিকা থাকতে পারে না। গত ১০০ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একজনেরই তুলনা হতে পারে। তিনি হলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি।
সুচারু: যাঁকে নিয়ে এত বিতর্ক, তাঁর কী প্রতিক্রিয়া?
মনোজিত্ মণ্ডল
না না, আমার মনে হয় এগুলো ওঁর এখন গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। অনেকদিন ধরে চলছে তো। একজন মহিলা, যিনি দেখতে সুন্দর, কলেজে পড়ান, তাঁকে ভিক্টিমাইজ করা হচ্ছে। যদি রত্নাদেবী মনে করেন বৈশাখীর কারণে ওঁদের ডিভোর্স হচ্ছে, তাহলে আমি ওঁকে(রত্না) আশ্বস্ত করছি, আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন, কখনই আপনাদের ডিভোর্স হবে না। আপনি তো ডিভোর্স চান না, তাহলে কেন কাদা ছোড়াছুড়ি করছেন?