Anubrata Mondal: মুদিখানা-মাছের দোকানদার থেকে কোটিপতি জেলা সভাপতি! ক্লাস এইট পাস কেষ্টর সাতকাহন...
Anubrata Mondal: ২০০৩-এ দলের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে তৃণমূল ত্যাগ করেন সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই সুশোভনের বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের জায়গায় বীরভূমে তৃণমূলের জেলা সভাপতি হিসেবে অনুব্রতকে দায়িত্ব দেন মমতা।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: একসময়ে মাগুর মাছ বিক্রি করতেন, এখন তিনি-ই নাকি ১০০০ কোটি টাকার মালিক! অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হতেই তীব্র তোপ দেগেছেন বিরোধীরা। কথায় আছে, বীরভূমে অনুব্রতর নামে বাঘে-গোরুতে একঘাটে জল খায়! অনুব্রতর অনুমতি ছাড়া একটি পাতাও নড়ে না বীরভূমে! যদিও আপাতত সবই অতীত। গোরুপাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। অষ্টম শ্রেণি পাস অনুব্রত মণ্ডল কীভাবে ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন বীরভূমের ডাকসাইটে দাপুটে নেতা? নানুরের হাটসেরান্দি গ্রামে অনুব্রত মণ্ডলদের গ্রামের বাড়ি। যদিও বর্তমানে থাকেন বোলপুরের নিচুপট্টি এলাকায় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পরই বাবার মুদিখানা দোকানে বসতে শুরু করেন অনুব্রত মণ্ডল। একইসঙ্গে গ্রিলের কারখানাও ছিল। তার কাজকর্মও দেখতেন। এরপরই নাকি কিছুদিন অনুব্রত মণ্ডল মাছের ব্যবসা করেন। এমনকি, বিয়ের পর অনুব্রত প্রোমোটিং ব্যবসাও শুরু করেছিলেন।
এখন কিশোর বয়সেই অনুব্রত মণ্ডলের রাজনীতিতে প্রবেশ। তখনও তৃণমূল কংগ্রেস গঠন হয়নি। শুধুই কংগ্রেস। ডাকাবুকো স্বভাবের জন্য সহজেই জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের নজরে পড়ে যান অনুব্রত। তখনই যুব কংগ্রেসের হয়ে কাজ করার সময়, আলাপ হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তখন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা। ধীরে ধীরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন অনুব্রত মণ্ডল। এরপর ১৯৯৮-তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেন, তখন অনুব্রতও কংগ্রেস ছেড়ে চলে আসেন তৃণমূলে। বীরভূমে তৃণমূলের যুব তৃণমূলের সভাপতি হন অনুব্রত। আর জেলা সভাপতি হন সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। ৫ বছরের মাথায়, ২০০৩-এ দলের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে তৃণমূল ত্যাগ করেন সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই সুশোভনের বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের জায়গায় বীরভূমে তৃণমূলের জেলা সভাপতি হিসেবে অনুব্রতকে দায়িত্ব দেন মমতা। তারপর থেকেই বীরভূমে অনুব্রতর 'জমি' তৈরির কাজ শুরু। ১৯ বছর ধরে টানা তৃণমূল জেলা সভাপতি। গোটা বীরভূমে তাঁর একচ্ছত্র দাপট।
যে দুর্গে প্রথম ফাটল ধরে ২০২১-এর অক্টোবরে। ১০ বার নোটিস এড়ানোর পর, শেষমেশ আজ অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করল সিবিআই। গোরুপাচার মামলায় কেষ্টকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এবার কি দল তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কঠোর ব্যবস্থা নেবে? এদিন সাংবাদিক বৈঠকে সেই সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, 'আমাদের দলের একটা কাঠামো আছে। যথা সময়ে যা নেওয়ার নেবে।' প্রসঙ্গত, অনুব্রত মমতার 'নেক নজরে' পড়েন ২০০০-এ। নানুরে গণহত্যার পর স্থানীয় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। তখনই তৃণমূল নেত্রীর বিশেষ স্নেহভাজন হয়ে ওঠেন তিনি। তখন থেকেই শুরু তাঁর রাজনৈতিক উত্থান।
তারপর ২০১১-তে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর আরও বহরে ফুলে-ফেঁপে ওঠেন প্রিয় 'কেষ্ট'। যদিও রাজনৈতিক উত্থানের পাশাপাশি, পুলিসকে বোমা মারার হুমকি থেকে গুড়-বাতাসা, নকুলদানার দাওয়াই, চড়াম-চড়াম ঢাক বাজানো, ভয়ঙ্কর হকি খেলার হুঁশিয়ারি দিয়ে বার বারই বিতর্কে জড়িয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। পাশাপাশি, তাঁকে পাশে বসিয়ে 'ক্লিনচিট' দিয়ে মমতা বলেছিলেন, 'ওর মাথায় অক্সিজেন কম যায়!' যা নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য-রাজনীতি। বিস্তর জলঘোলা হয়। এবার সিবিআই গ্রেফতারির পর কোন দিকে গড়াবে জল? সেই উত্তর লুকিয়ে সময়ের আস্তিনে।