Durga Puja 2022: দেবতাদের ক্রোধাগ্নি ও তেজঃপুঞ্জ থেকে আবির্ভূত হলেন দেবী দুর্গা!
'দুর্গা সপ্তশতী'তে রয়েছে, ব্রহ্মার ব্রহ্মত্ব, শিবের শিবত্ব, বিষ্ণুর বিষ্ণুত্ব এবং বিভিন্ন দেবতার সমষ্টিভূত তেজঃপুঞ্জ থেকে স্বরূপ ধারণ করেন দেবী দুর্গা।
সৌমিত্র সেন
দুর্গা অযোনিসম্ভবা। তিনি তো জন্ম নেন না, আবির্ভূত হন। বিভিন্ন পুরাণে দুর্গার উৎস, তাঁর নাম ও তাঁর অসুরসংগ্রাম নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন কাহিনি ও ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা। আমরা মহিষাসুর সংক্রান্ত কাহিনিটির সঙ্গেই বেশি পরিচিত, সেটি মূলত মার্কেণ্ডয় পুরাণের। 'দুর্গা সপ্তশতী'তে রয়েছে, ব্রহ্মার ব্রহ্মত্ব, শিবের শিবত্ব, বিষ্ণুর বিষ্ণুত্ব এবং বিভিন্ন দেবতার সমষ্টিভূত তেজঃপুঞ্জ থেকে স্বরূপ ধারণ করেন দেবী দুর্গা। যেসব পুরাণ ও উপপুরাণে দুর্গা সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে সেগুলি হল-- 'মৎস্যপুরাণ', 'মার্কণ্ডেয় পুরাণ', 'দেবীপুরাণ', 'কালিকাপুরাণ', 'দেবী ভাগবত'। দেবী জয়দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, গন্ধেশ্বরী, বনদুর্গা, চণ্ডী, নারায়ণী, শিবানী, কালী, গৌরী, উমা প্রভৃতি নানা নামে ও রূপে পূজিতা হন।
পুরাকালে মহিষাসুর নামে এক অসুর ব্রহ্মার বরে বলীয়ান হয়ে সমগ্র স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল অধিকার করলেন। মুনি-ঋষিরাও রেহাই পেলেন না তাঁর অত্যাচার থেকে। দেবতারা ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের শরণাপন্ন হলেন। জানা গেল, ব্রহ্মার বরে বলীয়ান মহিষাসুরকে ত্রিলোকের কোনও পুরুষই পরাভূত করতে পারবেন না। তাই তিনি অপরাজেয়। দেবতাদের মুখে মহিষাসুরের অত্যাচারের কাহিনি শুনে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ক্রোধান্বিত হলেন। তাঁদের মুখমণ্ডল ভীষণাকার ধারণ করল। তাঁদের ক্রোধাগ্নি এবং অন্য দেবতাদের তেজ সম্মিলিত হয়ে তৈরি হয়ে উঠলেন এক নারী। ত্রিভুবনের দুর্গতি নাশের জন্য তাঁর আবির্ভাব। তিনি দুর্গা।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2022: বিশদে জেনে নিন এ বছরের দুর্গাপুজোর দিন, তিথি ও শুভ মুহূর্ত
ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে দুর্গা আবির্ভূত হয়েছিলেন বলে দুর্গার আর এক নাম 'কাত্যায়নী'। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে মহর্ষি কাত্যায়নের আশ্রমে আবির্ভূতা হলেন তিনি। অমাবস্যা-পরবর্তী শুক্লপক্ষের সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী তিথিতে ঋষি কাত্যায়ন এই দেবীর আরাধনা করেছিলেন। সমস্ত দেবতারা এই সময়ে তাঁদের শক্তি ও অস্ত্র দিলেন নবোদ্ভাবিত সেই দেবীকে। ব্রহ্মা দিলেন কমণ্ডলু, ইন্দ্র দিলেন বজ্র, কুবের দিলেন গদা, বিষ্ণু চক্র, মহেশ্বর ত্রিশূল। এই ভাবে দেবী ক্রমে পেলেন শঙ্খ, তীর-ধনুক, তরবারি, বর্শা, ঢাল, পদ্ম ইত্যাদি। এবং এই ভাবে দেবী ক্রমে হলেন দশভুজা। দেবীকে হিমালয় দিলেন সিংহ। দেবী হলেন সিংহবাহিনী।
দেবী দুর্গাকে পরমা প্রকৃতি ও সৃষ্টির আদি কারণ বলে মনে করা হয়। তিনি শিবের স্ত্রী পার্বতী, কার্তিক ও গণেশের জননী, কালীর অন্যরূপ। বাংলা মঙ্গলকাব্যে এবং আগমনীগানে শিবজায়া হিমালয়দুহিতা পার্বতীর কথা আছে। রয়েছে তাঁর বিবাহিত জীবনের অপূর্ব বর্ণনা। রয়েছে সপরিবার পিতৃগৃহে অবস্থানের আনন্দময় দিনগুলির কথাও। হিমালয়গৃহে বা বাপের বাড়িতে দুর্গার এই দিনগুলিই হল আমাদের এই সাধের দুর্গাপূজা।