ক্যানসার কেড়েছে ছেলেকে, লকডাউনে বুভুক্ষ বৃদ্ধের বাড়িতে নিজে গিয়ে রেশন পৌঁছে দিলেন রেশন ডিলার রাজেশ
চোখে জল নিয়ে সুবোধবাবু রেশন দোকানের মালিক রাজেশ খেমকাকে জানান , "বাড়িতে কেউ নেই।এক ছেলে ছিল। সে ক্যান্সারে মারা গেছে।" সুবোধবাবু মুখে এই কথা শোনার পর মানবিক মূল্যবোধের পরিচয় দেন রেশন দোকানের মালিক রাজেশ খেমকা।
নিজস্ব প্রতিবেদন: রাজ্য জুড়ে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে জেলায় জেলায় রেশন নিয়ে কালোবাজারি চলছে। ভূরিভূরি অভিযোগ রেশন দোকানের মালিকদের বিরুদ্ধে। কিন্তু রেশন মালিকের মানবিক মুখও দেখা গেছে এই রাজ্যে। আসানসোলের ধাদকা শহর। শনিবার সকালে এখানকার একটি রেশন দোকানে এক বৃদ্ধ রেশন নিতে আসেন। নাম সুবোধ কুমার পান্ডে । বয়স ৮৩ বছর । লাঠিতে ভর দিয়ে রেশন দোকানে এসে জানতে চান তিনি রেশন পাবে কিনা! এটা কি রকম প্রশ্ন? কার্ড থাকলেই রেশন পাওয়া যাবে। সমস্যা তো সেখানেই। সেই প্রশ্নের উত্তরে তিরাশি বছরের সুবোধবাবু জানান, "কয়েকমাস আগে রেশন কার্ডের আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এখনও আমার হাতে রেশন কার্ড পৌঁছয়নি। যার জন্য আমি রেশন পাই না। কিন্তু এই লকডাউন চলাকালীন রাজ্যসরকার ঘোষণা করেছিল বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে ফুড কুপন। আর সেই কুপন নিদিষ্ট রেশন দোকানে নিয়ে গেলে রেশন পাওয়া যাবে । আমি সেই ফুড কুপন পেয়েছি। তাই কুপন পাওয়ার পর জানতে এসেছি রেশন পাব কিনা। রেশন না পেয়ে খুব কষ্টে আছি ।"
আরও পড়ুন: সোমবার থেকে খুলছে মদের দোকান, ৩০ শতাংশ দাম বাড়াল রাজ্যে সরকার
বৃদ্ধের কুপন দেখে রেশন মালিক রাজেশ খেমকা সুবোধ পান্ডেকে জানান, " রেশন পাওয়া যাবে। কিন্তু খুব ভিড় । দেরি হবে । বাড়ির অন্য কাউকে পাঠিয়ে দিন।" তখনই চোখে জল নিয়ে সুবোধবাবু রেশন দোকানের মালিক রাজেশ খেমকাকে জানান , "বাড়িতে কেউ নেই।এক ছেলে ছিল। সে ক্যান্সারে মারা গেছে।" সুবোধবাবু মুখে এই কথা শোনার পর মানবিক মূল্যবোধের পরিচয় দেন রেশন দোকানের মালিক রাজেশ খেমকা। তিনি সুবোধবাবুকে জানিয়ে দেন, লাইনে কষ্ট করে তাকে দাঁড়াতে হবে না। তাকে বাড়ি চলে যেতে বলেন। আর জানিয়ে দেন সময় মতো রেশন বাড়ি পৌছে দেওয়া হবে। এরপর দোকানের ভিড় সামলে সবাইকে রেশন দেওয়ার পর রেশন দোকানের মালিক রাজেশ খেমকা ঘন্টা তিনেক পর রেশন সামগ্রী সহ ফাইলপত্র নিয়ে হাজির হন সুবোধ পান্ডের বাড়ি। তার হাতে তুলে দেন সুবোধবাবুর প্রাপ্য রেশন ।সেই সঙ্গে কাগজপত্রে প্রয়োজনীয় সইসাবুদও করিয়ে নেন। রেশন দোকানের মালিক বাড়িতে রেশন পৌছে দেবে স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি সুবোধবাবু। চোখ ভরা জলে রেশন হাতে নিয়ে রাজেশ খেমকাকে আশীর্বাদ করার পাশাপাশি আবেগতাড়িত গলা জানান, "সমাজে এই ধরনের মানুষ আজও আছে বলে আমাদের মতো অসহায় মানুষগুলো বেঁচে আছে । লকডাউনের সময় উনি যেভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিলেন সেই ৠণ কোনদিন শোধ করতে পারব না।" আর কথা বলতে পারলেন না সুবোধ পান্ডে। সুবোধবাবুর চোখে জল দেখে রেশন দোকানের মালিক রাজেশ খেমকাও কেমন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন সেই তিরাশি বছরের বৃদ্ধর দিকে । এক মিনিট আগে যার অনুভূতিতে ছিল না তিনি করছেন। কিন্তু সুবোধবাবুর চোখে জল আর অপ্রত্যাশিত তৃপ্তি দেখে রাজেশ খেমকা উপলব্ধি করেছেন কত ছোট্ট উপকার মানুষকে কতটা মানসিক তৃপ্তি দেয়। ঘটনাচক্রে রেশন দোকানের মালিক রাজেশ খেমকাও আবেগতাড়িত হয়ে জানান , " এইরকম একটা কাজ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে । "যাওয়ার সময় রাজেশ খেমতা সুবোধবাবুকে কথা দিয়ে গেছেন তার রেশন কার্ড যাতে তিনি দ্রুত হাতে পান সেই ব্যাপারে সবরকম সাহায্য করবেন । এই কাজে মানসিক তৃপ্তি পেয়ে তার দোকানের এইরকম অসহায় তিনজন ক্রেতার বাড়িতে নিজে হাতে রেশন পৌছে দিয়ে এসেছেন রাজেশ খেমকা । আর আগামীদিনেও পৌছে দেবেন বলে কথাও দিয়ে এসেছেন তাঁদের । যেখানে রেশনের কালোবাজারি নিয়ে ভূরিভূরি অভিযোগ সেখানে রাজেশ খেমতার মনুষ্যত্ব অন্য দিশা দেখালো ।