ইরানের বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত অন্তত ৪৪৮, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন গঠন জাতিসংঘের
২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনিকে "অনুপযুক্ত" হেড স্কার্ফ পরার জন্য ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নীতি পুলিস হেফাজতে নেওয়ার পরে হেফাজতেই তাঁর মৃত্যু হয়। এর পরে হেফাজতে হিংসার অভিযোগ এনে ইরানের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে ইরানে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউনে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী কমপক্ষে ৪৪৮ জনকে হত্যা করেছে। মঙ্গলবার একটি মানবাধিকার গোষ্ঠীর রিপোর্টে এই খবর জানা গিয়েছে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে এবং সংঘর্ষ এবং এতে বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারীদের হত্যার সাক্ষী হয়েছে বাকিরা।
নরওয়ের ইরান হিউম্যান রাইটস গ্রুপের মতে, ৪৪৮ জন নিহতের মধ্যে ৬০ জনেরই বয়স ১৮ বছরের কম এবং এর মধ্যে নয় জন মেয়ে ছিল। নিহতদের মধ্যে আরও ২৯ জন মহিলা রয়েছেন। প্রতিবেদন অনুসারে, নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীরা শুধুমাত্র গত সপ্তাহেই ১৬ জনকে হত্যা করেছে। তাদের মধ্যে ১২ জন কুর্দি-জনবসতিপূর্ণ এলাকায় নিহত হয়েছে। এই অঞ্চলে বিক্ষোভ বিশেষভাবে হিংসাত্মক রূপ নিয়েছে।
আগের সপ্তাহগুলিতে নিহতদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া এবং অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। এই মানবাধিকার গোষ্ঠীটি বলেছে যে মৃত্যুর সংখ্যায় শুধুমাত্র নিরাপত্তা কর্মী নয়, ক্র্যাকডাউনে নিহত সাধারণ নাগরিকরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
মঙ্গলবার ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরালি হাজ্জিজাদেহের মতে, ৩০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছেন। আরব নিউজের খবরে বলা হয়েছে, এই প্রথম সরকার এই ধরনের সংখ্যা নিশ্চিত করেছে।
২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনিকে 'অনুপযুক্ত' হেড স্কার্ফ পরার জন্য ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নীতি পুলিস হেফাজতে নেয়। এরপরে হেফাজতেই তাঁর মৃত্যুর ঘটনার পড়ে সেখানে তাঁর উপর অত্যাচারের অভিযোগ করা হয় এবং ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ইরানে শুরু হওয়া বিক্ষোভে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্তের জন্য একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন গঠনের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের (UNHRC) প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল ভারত।
আরও পড়ুন: ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে আমেরিকাকে হস্তক্ষেপ না করার হুঁশিয়ারি চিনের
ট্যুইটারে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল বলেছে, ‘তার ৩৫ তম বিশেষ অধিবেশনে, UN মানবাধিকার কাউন্সিল ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানে ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে শুরু হওয়া বিক্ষোভে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্ত করার জন্য একটি নতুন ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে’।
ভারত ছাড়াও মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং কাজাখাস্তানও এই রেজুলেশন থেকে বিরত ছিল। অন্যদিকে পাকিস্তান এবং চিন এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
এরপরেও ৪৭ সদস্যের মানবাধিকার সংস্থার বিশেষ অধিবেশনে প্রস্তাবটির গৃহীত হয়। এর পক্ষে ২৫টি, বিপক্ষে ছয়টি ভোট পড়ে এবং ১৬ জন অনুপস্থিত থাকে। এরফলে মানবাধিকার কাউন্সিল এখন ইরানে বিক্ষোভের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি সত্য অনুসন্ধান মিশন প্রতিষ্ঠা করেছে।
এছাড়াও, বিক্ষোভকারীদের প্রতি ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর হিংসাত্মক প্রতিক্রিয়া তেহরান এবং পশ্চিমি নেতাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে নাড়া দিয়েছে।