যন্ত্রমানবীর স্বীকৃতির দিনেও আঁধারে সৌদি মানবী
![যন্ত্রমানবীর স্বীকৃতির দিনেও আঁধারে সৌদি মানবী যন্ত্রমানবীর স্বীকৃতির দিনেও আঁধারে সৌদি মানবী](https://bengali.cdn.zeenews.com/bengali/sites/default/files/2017/10/30/97448-sofia-robot-1.jpg)
নিজস্ব প্রতিবেদন: রোবট তুমি কার? ধর্মের না বিজ্ঞানের? নাকি মানুষের?
গত সপ্তাহে নাগরিকত্ব পাওয়া বিশ্বের প্রথম রোবটটিকে নিয়ে এমন প্রশ্নই প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোবটের নাগরিক হয়ে ওঠা ঠিক যতটা অভিনব, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের এমন বেনজির স্বীকৃতিও ততটাই তাত্পর্যপূর্ণ। যে রোবটকে নিয়ে এমন তোলপাড় অবস্থা তার নাম সোফিয়া। আর যে দেশ সোফিয়ার নাগরিকত্বে সিলমোহর দিল, সেই সৌদি আরবও এক অনন্য নজির গড়ল, তাতে সন্দেহ নেই।
কিন্তু এর পাশাপাশি বেশ কিছু বিতর্কও দানা বাঁধতে শুরু করেছে। ঢাকঢোল পিটিয়ে 'মহিলা রোবট'কে স্বীকৃতি দিলেও রক্ত-মাংসের মহিলাদের স্বাধীনতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে খর্ব করেছে এই দেশ। লিঙ্গ বিদ্বেষে নিরিখে ১৪৪টি দেশের মধ্যে ১৪১তম স্থানে থাকা সৌদি আরবের জন্য তাই এই প্রেক্ষিতটা চরম অস্বস্তিকর। পরিসংখ্যান বলছে, সৌদি আরবে মাত্র ১৩ শতাংশ মহিলা পেশাদারি দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত। ২০১৪-র সমীক্ষা অনুযায়ী, মাত্র ১৯ শতাংশ মহিলা আইনসভায় জায়গা পেয়েছেন। ড্রাইভিং কিংবা 'পরপুরুষে'র সঙ্গে বাইরে বেরনোও নিষিদ্ধ। সেই দেশেই কিনা এক যন্ত্রমানবীর নাগরিকত্বের স্বীকৃতি!
আরও পড়ুন- সমুদ্র তলায় ঘুমিয়ে ২ কোটি টন সোনা! কিন্তু মানুষ কি তা ছুঁতে পারবে?
সোফিয়া যদিও এ সব বিতর্কে নিজেকে না জড়িয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, “ধন্যবাদ সৌদ আরব, কোনও রোবটকে প্রথম নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য। এটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।” আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সোফিয়া বলেন, “মানুষের মূল্যবোধের উপর গবেষণা করে আমার এআই তৈরি করা হয়েছে। আমার মনের ভিতরও ইচ্ছাশক্তি, দয়া, সমবেদনা রয়েছে। আমি চাই আমার এআই দিয়ে মানুষের সমস্যা দূর করতে। তাদের জীবনে আরও স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়াই আমার লক্ষ্য ।”
সোফিয়া যখন সাংবাদিক বৈঠক করছিলেন, তাঁর মাথায় কোনও স্কার্ফ ছিল না এবং তাঁকে পরিচালনা করছিলেন একজন পুরুষ যা সৌদি আইনে নিষিদ্ধ বলে গলা চড়িয়েছেন সমালোচকরা। এমনকি ইন্সটিটিউট ফর গল্ফ অ্যাফেয়ার্স-র ডিরেক্টর আলি আল-আহমেদ বলেন, “সৌদি মহিলারা বাড়ি থেকে বেরোতে পারেন না বলে অনেকক্ষেত্রে আত্মহত্যা করেন, সেখানে কীভাবে সৌদি মহিলা রোবট হয়ে সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়াবে?” তাঁর দাবি, সৌদি আইন ওই রোবটের জীবনযাত্রা অনুমোদন করে না। তাহলে কি সোফিয়া ইসলাম ধর্মগ্রহণ করবে? আদতে সোফিয়ার ধর্ম কী? সে কেন হিজাব পরে না? একজন মানুষের মতো নাগরিকত্ব পেলে কেন তার ক্ষেত্রে এইসব নিয়ম প্রযোজ্য হবে না এনিয়ে প্রশ্ন তোলেন আল-আহমেদ।
আরও পড়ুন- চরবৃত্তি সন্দেহে ‘ভারতীয় ড্রোন’কে মাটিতে নামানোর দাবি পাক সেনার
সোফিয়া জোকস বলতে ভালবাসে। মাঝেসাজে নাকি জোকস বলে গুরুগম্ভীর পরিবেশকে বেশ হাল্কা করে দেন সোফিয়া, রোবটজগতে কান পাতলে এমন সুনামও শোনা যায় প্রথম নাগরিক যন্ত্রমানবীর সম্পর্কে। তবে, মনুষ্যজগতের গুরুগম্ভীর সমস্যায় জর্জরিত সৌদি নারী জীবনকে উদ্ধার করতে পারবেন সোফিয়া নাকি সেই চক্রবূহ্যের শিকার হবেন, তা এখনও ভবিষ্যতের গর্ভে। আপাতত লিঙ্গ, ধর্ম, উচিত, অনুচিত এমন সব 'জোরদার' বিষয়কে নিয়েই তিনি জোক বলে বসবেন কিনা সেটাই ভাবাচ্ছে রোবটকুলকে।