বিপাকে পুতিন, ইউক্রেন যুদ্ধে ছারখার এক লক্ষ রুশ সেনা!
বন্দর নগরীতে তার সৈন্যদের জন্য সরবরাহ লাইন বজায় রাখার অসুবিধার কারণে রাশিয়া বর্তমানে খেরসন থেকে তার বাহিনীকে প্রত্যাহারের দিকে মনোনিবেশ করছে। একজন মার্কিন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার বলেছেন যে যুদ্ধে প্রায় ৪০,০০০ ইউক্রেনীয় সাধারণ মানুষ এবং প্রায় ১০০,০০০ রুশ সৈন্য নিহত অথবা আহত হয়েছেন নয় মাসের এই যুদ্ধে।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্র খেরসন থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার একদিন পরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে যে ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে এক লাখেরও বেশি রুশ সৈন্য নিহত অথবা আহত হয়েছেন। যেহেতু যুদ্ধের কোনও শেষ দেখা যাচ্ছে না, ইউক্রেন বলেছে যে তারা রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য আলোচনার টেবিলে ফিরে আসবে। কিন্তু এই কাজের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটি শর্তেই তাঁরা রাজি। তাঁরা দাবি করেছে আলচনার জন্য রাশিয়াকে ইউক্রেনের দখলকরা সব জমি ফিরিয়ে দিতে হবে। খেরসন বন্দর শহর ছিল এমনই একটি দখলকৃত অঞ্চল যেখানে বর্তমানে রাশিয়ান সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বন্দর নগরীতে তার সৈন্যদের জন্য সরবরাহ লাইন বজায় রাখার অসুবিধার কারণে রাশিয়া বর্তমানে খেরসন থেকে তার বাহিনীকে প্রত্যাহারের দিকে মনোনিবেশ করছে। এই সৈন্য প্রত্যাহার খেরসন অঞ্চলের বাকি অংশের রাশিয়ান নিয়ন্ত্রণের উপর চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই অঞ্চলে রাশিয়া থেকে ক্রিমিয়া পর্যন্ত একটি সেতু তৈরি করা হয়েছে। যা এই উপদ্বীপকে মস্কোর সঙ্গে ২০১৪ সালে সংযুক্ত করেছিল।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার বলেছেন যে যুদ্ধে প্রায় ৪০,০০০ ইউক্রেনীয় সাধারণ মানুষ এবং প্রায় ১০০,০০০ রুশ সৈন্য নিহত অথবা আহত হয়েছেন নয় মাসের এই যুদ্ধে।
যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজয়ের মধ্যেই, রাশিয়া তার সৈন্যদের খেরসন থেকে সরে যেতে বলেছিল। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ বলেছেন, রাশিয়ার খেরসন শহর থেকে সরে আসতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। রাশিয়ার এখনও এই অঞ্চলে ৪০,০০০ সৈন্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে যে চারটি প্রভিন্সকে সংযুক্ত করার দাবি করেছিলেন তার মধ্যে খেরসন প্রদেশটি একটি। এই দাবিকে বেশিরভাগ দেশ অবৈধ বলে নিন্দা করেছিল।
আক্রমণের প্রথম দিকে রাশিয়ার হাতে দখল হওয়া প্রথম শহরগুলির মধ্যে খেরসনও ছিল। ইউক্রেনের বাহিনী গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এই শহরটিতে অগ্রসর হচ্ছে এবং গ্রামগুলো পুনরুদ্ধার করছে।
এমন ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে যে ইউক্রেনীয় বাহিনী খেরসন শহরের কাছাকাছি চলে আসছে। ইউক্রেনীয় বাহিনী দক্ষিণে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ৪১টি ল্যান্ডমাইনপূর্ণ বসতি মুক্ত করেছে।
যদিও ইউক্রেন এত সহজে বিজয় দাবি করার বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। তাঁরা সতর্ক করে দিয়েছে যে এটি ভ্লাদিমির পুতিনের সেনাবাহিনীর ফাঁদ হতে পারে। ইউক্রেনের সেনাপ্রধান ভ্যালেরি জালুঝনি বলেছেন, কিয়েভ এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি যে রাশিয়া সত্যিই শহরটি থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করছে কিনা।
আরও পড়ুন: মাস্কের মহিমায় যিশুও পেলেন ব্লু টিক, এবার অপেক্ষা সান্টা ক্লজের
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির একজন উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক বলেছেন, রাশিয়া খেরসনকে মৃত্যুর শহরে পরিণত করতে চেয়েছিল, অ্যাপার্টমেন্ট থেকে নর্দমা পর্যন্ত সবকিছু ভেঙে নদীর ওপার থেকে শহরকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেছিল।
RF wants to turn Kherson into a "city of death". Ru-military mines everything they can: apartments, sewers. Artillery on the left bank plans to turn the city into ruins. This is what "Russian world" looks like: came, robbed, celebrated, killed "witnesses", left ruins and left.
— Михайло Подоляк (@Podolyak_M) November 10, 2022
জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন আমাদের যুদ্ধক্ষেত্রে এবং কূটনীতির মাধ্যমে এগোতে হবে যাতে আমাদের সমস্ত অঞ্চল অর্থাৎ আমাদের সমগ্র আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্ত বরাবর, আমাদের ইউক্রেনের পতাকা স্থাপন করা যায়।
এই অঞ্চলে রাশিয়ার বসানোন উপ-প্রধান, কিরিল স্ট্রেমুসভ সংযুক্তির মূল সমর্থক ছিলেন, তিনি একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার কয়েক ঘন্টা পরেই খেরসন থেকে সৈন্য সরানোর ঘোষণা করা হয়।
ইতিমধ্যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য একটি নতুন ৪০০ মিলিয়ন ডলার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ভূ-পৃষ্ঠ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কারণ কিয়েভের মূল পরিকাঠামোকে লক্ষ্য করে সাম্প্রতিক রাশিয়ান বিমান হামলার ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে।