‘লক্ষ্মী’ মেয়ের নষ্ট গদ্য
শর্মিলা মাইতি ছবির নাম- লক্ষ্মী রেটিং- ***
শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম- লক্ষ্মী
রেটিং- ***
শেষ কবে নাগেশ কুকুনুরের ভাল ছবি দেখেছি, স্মৃতি হাতড়ে বের করতে হল। ডোর। সেই আয়েষা টাকিয়ার নিষ্পাপ মুখ। অপূর্ব ছন্দোময় গল্প। তার পর পাঁচ-ছ বছর তাঁর কেরিয়ার থেকে একেবারে বাদ দিলেও কোনও অত্যুক্তি হবে না, বরং রেজুমেটা আরও বেশি অ্যাকসেপ্টেবল হতে পারে। যাই হোক, সে সব দুর্দিন কাটিয়ে অবশেষে যে তাঁর লক্ষ্মীশ্রী ফিরেছে, সেটা লক্ষ্মী দেখার পর মনে হল। কোনও প্রভাব, কোনও নাক-গলানো ছাড়াই স্বাধীনভাবে, প্রাণ খুলে গল্প শোনাতে পারলেন, এটাই রক্ষে!
গার্ল-ট্রাফিকিং শব্দটার সঙ্গে আমরা প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হই। মিডিয়ার দৌলতে এতটাই বহুচর্চিত যে, কখনও কখনও আমরা বড় বেশি নির্লিপ্ত হয়ে যাই। স্বাভাবিক চেতনাগুলো ঘুমিয়ে পড়ে। কাগজের পাতা উল্টে অন্য খবরে চলে যাই, কিংবা অন্য চ্যানেলে। সেইজন্যেই ‘লক্ষ্মী’-র আবির্ভাব। স্বাভাবিক বোধ তৈরি হওয়ার আগেই, শরীর ফুটতে শুরু করলেই যেসব গরিব অরক্ষিত মেয়েরা বিক্রি হয়ে যায় অন্ধকার গলিতে, শৈশব হারিয়ে যায় প্রতিমুহূর্তের ধর্ষণে, সেই সব শিশু-নারীর কাহিনি। দেখলে গায়ে কাঁটা দেবে। ভেতরে গর্জে উঠবে সেই ঘুমন্ত, নির্লিপ্ত বাঘ।।।
মোনালি ঠাকুর। মিষ্টি গলার মিষ্টি মেয়ে। নাগেশ এই মিষ্টত্ব ব্যবহার করলেন একটা তীক্ষ্ম কাহিনি বলার জন্য। সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়ে যাওয়া। বার বার পালানোর চেষ্টা করেও দালাল-ব্যবসায়ী-পুলিস সম্মিলিত এই চক্র থেকে কিছুতেই নিষ্কৃতি না পাওয়া। এই সব না পাওয়া থেকেই একদিন হঠাত্ই বড় হয়ে যায় লক্ষ্মী। মর্মান্তিক সেই সব দৃশ্য সহ্য করবার মতো মানসিক শক্তি যদি থাকে দর্শকের, তাহলে বুঝবেন, এই কাহিনি কতখানি বাস্তব। মেলোড্রামাবর্জিত। সবচেয়ে বড় কথা, যে-কাহিনি প্রতিদিন ঘটে, তবু আমরা চক্ষুকর্ণ ঢেকে জ্ঞানী হনুমান হয়ে বসে থাকি।
বড় বেশি চিত্কার করে জানালেন নাগেশ। যে চিত্কারের শব্দ শোনা গেল না, হৃদয়ে একটা অদ্ভুত কম্পন দিয়ে গেল। মোনালির মধ্যে যে-নায়িকাকে পাওয়া গেল, সে বড়ই স্বাভাবিক। অভিনয় করছেন বলে অতিরিক্ত চাপ নেননি। তাই বড় সহজ সাবলীল। শৈশব-কৈশোরের মাঝে দাঁড়ানো একটি অসহায় মুখ। যাঁরা তাঁকে বহু বছর আগে বাংলা সিরিয়াল আলোকিত এক ইন্দু-তে দেখেছেন, তাঁদের জানাই, একটুও বদলায়নি সেই হাসিমুখ। ঠিকঠাক সুযোগ পেলে নায়িকা হিসেবে আলাদা কেরিয়ার গড়তে পারবেন। নিশ্চিতভাবেই।
যাঁরা বেশ কয়েকবছর আগে লিলিয়া ফরএভার ছবিটা দেখেছেন, তাঁদের কাছে এটা সেই একই বিষয়ের ভারতীয় ছবি বলে মনে হতে পারে। তবে এ মেয়ের নষ্ট গদ্যের গতিপ্রকৃতি আলাদা। বঞ্চনার ইতিহাস অত নিঃস্ব নয়। বরং বুদ্ধি খাটিয়ে আবার সেই কৈশোর খুঁজে নেওয়ার আর্তি আছে। এ গদ্য আপনাদের কষ্ট দেবে, তবে অসহায় করে তুলবে না। লক্ষ্মীই বলবে উত্তরণের পথ।
ছবির গান মন ছুঁয়ে যায়। মনে রেখে যায় রেশ। তীব্র কঠিন বাস্তবের সঙ্গে নিশ্পাপ শৈশবের লড়াই। গানের ভাষাতেও ফুটে ওঠে। নাগেশ কুকুনুর যে আরও একবার আশা জাগালেন, এটাই এক্সট্রা ফ্রি!