Jay Prakash Revolts: ঠান্ডা ঘরে দলের ভালোমন্দ যারা বিচার করছেন তারা কাচের ঘরে বসে অন্যকে ঢিল ছুড়ছেন: জয়প্রকাশ
ঠিক হল হয় অন্য দল থেকে নেতা আনতে হবে নয়তো বাইরের রাজ্যের নেতাদের এনে বাংলার ভোট বৈতরণী পার করা হবে
নিজস্ব প্রতিবেদন: রাজ্য বিজেপির ডামাডোল ফের প্রকাশ্য চলে এল। শোকজ ও পরদিন দল থেকে সাময়িক বরখাস্তের পর সাংবাদিক সম্মেলন করে দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব হলেন জয়প্রকাশ মজুমদার ও রীতেশ তিওয়ারি। গতকালই জয়প্রকাশ বলেন, বরখাস্তের নির্দেশের বিরুদ্ধে যা বলার তা কাল বলব। আজ কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রীতেশ তিওয়ারিকে পাশে বসিয়ে জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন-
## আমার পেছনের রাজনৈতিক ইতিহাস একটু বলে নেওয়া প্রয়োজন। বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। প্রায় ১২ বছর জেল খেটেছিলেন। কংগ্রেস রাজনীতি করতেন।
## আমরা কৃষ্ণনগরের মানুষ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র পরিষদ করেছি। ২০১৪ সালে বিজেপিতে যোগ দিই। এই দলটি সম্পর্কে বলা হয়, পার্টি ইউদ ডিফারেন্স। ২০১৪-২০২২ এই ৮ বছর বিজেপিতে আমার কার্যকাল। পরিবারিক রাজনীতির সূত্রে প্রণববাবু, সুশীল ধাড়া, প্রফুল্ল সেন, প্রিয়দাকে দেখেছি। গত ৩৫-৪০ বছরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছি।
## বিজেপিতে যোগদানের পরের বছরই আমাকে সহ সভাপতি করে দলে। পরের বছরে আমাকে পলিটিক্যাল ফিডব্যাক ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কেন্দ্রকে নিয়মিত রাজ্যের রাজ্নৈতিক পরিস্থিতি খবর পাঠানোর ছিল আমার উপরে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে ও ভোটের পর ৩ মাস পর পর্যন্ত ওই কাজ করে এসেছি।
## ২০১৬ সালের ভোটে ৩ কেন্দ্র জয়ী হয় বিজেপি। ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে ১৮টি কেন্দ্র জিতে আসি। শাসকদলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে আসে বিজেপি। দলের সবাই মনে করে ছিলেন দল একটা স্টাইকিং পজিশনে চলে এসেছে।
## রাজ্য বিজেপির এই উত্থান রাজ্য ও কেন্দ্রের কয়েকজন নেতা মেনে নিতে পারেননি। তাদের পরিকল্পনা ছিল রাজ্য বিজেপিকে দুর্বল করতে হবে। সেই পরিকল্পনা শুরু হয়। যারা ১৮টি আসন নিয়ে এসেছিল তাদের উপরে আর ভরসা করা যাবে না এমন একটা পরিকল্পনা শুরু হয়ে গেল। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ওই পরিকল্পনার গতি আরও বাড়ল। ঠিক হল হয় অন্য দল থেকে নেতা আনতে হবে নয়তো বাইরের রাজ্যের নেতাদের এনে বাংলার ভোট বৈতরণী পার করা হবে।
## সেই সময় আমি দিনের পর দিন বলেছি যেভাবে দল চলছে তা ঠিক হচ্ছে না। মানুষ বিজেপিকে একটা অল্টারনেট ফোর্স বলে যখন মনে করছে তখন জেলা কমিটি, বুথ কমিটির উপরে ভরসা করা উচিত। কিন্তু তা করা হয়নি। তার পরিবর্তে বাইরে থেকে কিছু নেতা আনা হল। এরা রাজ্যের অন্য দলের নেতা কিংবা ভিন রাজ্যের নেতা। এদেরই শাসক দল বলেছে বহিরাগত। এতে তৃণমূল পর্যায়ের হাজার হাজার, লাখ লাখ সমর্থকের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।
## আমাদের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক(সংগঠন) একটি বৈঠকে বললেন, দিলীপ ঘোষ, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে বাদ দিয়েই এই রাজ্যে বিজেপিকে জিতিয়ে দেখিয়ে দেব। মধ্যপ্রদেশ উত্তর, প্রদেশ থেকে লোকজন এনে দেখিয়ে দেব যে তোমাদের দরকার নেই।
## কংগ্রেসে দেখেছি হাইকমান্ডের দাপট। বিজেপিতেও তাই দেখলাম।
## বিধানসভার ফলপ্রকাশের দিনে ১২টার পর থেকেই বড়বড় গাড়িগুলো বেরিয়ে যেতে শুরু করল। অনেককে বলতে শুনেছি কত তাড়াতাড়ি দিল্লির বিমান মিলবে। সেই সময় এই জয়প্রকাশ ছাড়া কেউ ছিলেন না।
## ১১ জুন মুকুল রায় দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। সেদিনও বিজেপির রাজ্য অফিসে এই ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার জন্য কোনও নেতাকে পাওয়া য়ায়নি। আমাকেই বলা হয় প্রেসকে গিয়ে সামলান।
## ভোট পরবর্তী অশান্তি নিয়ে আন্দোলন হয়নি। আমরা আদালতে গিয়েছি। মারখাওয়া কর্মীদের পাশে থাকা, সেই জেলায় থাকা উচিত ছিল। কিন্তু নেতারা বলেছে হাইকোর্টে গেলে এর থেকে প্রভাব ভালো পড়বে।
## বামেদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই হাইকোর্টের উপরে নির্ভর করে লড়াই করেননি। মাঠ ময়দানে তিনি লড়াই করেছিলেন। এটাই বাংলার রাজনীতি।
## ২০২১ এর ভোটে আমাদের বলা হয়েছিলব আপনাদের না হলেও আমরা জিতব। কিন্তু আমরা যখন ৭৭ আসনে আটকে গেলাম তখন তার কোনও পর্যালোচনা হল না। এবং ভার্চুয়াল মিটিংয়ে এনিয়ে যদি কেউ কথা তুলতো তাহলে হয় তাদের চুপ করিয়ে দেওয়া হতো নয়তো তার মাইক অফ করে দেওয়া হয়েছে।
## কীসের জন্য আমরা আসন কম পেলাম তা নিয়ে আলোচনাই হল না। শরীরে কোনও রোগ হলে তাকে চাদর ঢাকা দিলে তা সারে না। তার চিকিতসা করতে হয়।
## তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের দাবির কথা আমি কেন্দ্র পাঠিয়েছি। কিন্তু তা যে প্রশংসিত হয়েছে তা ভাববেন না।
## রাজ্য বিজেপির অফিস এখন কড়া নিরাপত্তায় ঘিরে ফেলা হয়েছে। সাধারণ কর্মী সেখানে যেতে পারেন না। রাজ্য বিজেপি অফিসে বসে যারা রাজ্য বিজেপির ভালোমন্দ বিচার করছেন তারা কাচের ঘরে বসে অন্যের দিকে ঢিল ছুড়ছেন। আর সবরকম সংযোগহীন হয়ে যাচ্ছেন বলেই আমাদের ধারনা।
## বাংলায় যে দলই ক্ষমতায় এসেছে তারা লড়াই করে ক্ষমতায় এসেছে। তাই দলের কর্মীদের পার্টি অফিসে ডেকে তাদের কী করতে হবে বলে ক্ষমতায় আসা য়ায় না।
## এখনও সময় রয়েছে। বিজেপি যদি তার এরকম কেন্দ্রীকতা ভুলে যদি দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাহলেই এই পার্টি আগামী দিনে ওপরের দিকে উঠে আসতে পারে।
## বিজেপি নেতারা বলেন, আমরা এবিভিপি করে আসা লোক। এবিভিপি করাটা নাকি বড় তকমা। বাংলায় তারা কী করেছে সেটা একটা বড় প্রশ্ন। কিন্তু আজকে শিক্ষকের চাকরি হচ্ছে না, স্কুল বন্ধ রয়েছে, কোনও আন্দোলন নেই। শুনছি রাজ্য বিজেপি নাকি চালাচ্ছে এবিবিপি। এখানেই কনফ্লিক্ট।
## পার্টির নতুন সভাপতি হয়েছেন। দিলীপদার আরও কিছুটা সময়কাল ছিল। ২০২২ এর শেষ পর্যন্ত তাঁর মেয়াদ ছিল। তার মধ্যেই নতুন সভাপতি নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি এসে নতুন জেলা পদাধিকারী ও জেলা সভাপতির নান ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এর দায় এখন কেই নিতে চাইছেন না। কারণ কাজের লোকের থেকে কাছের লোকের উপরে ভিত্তি করে এই কমিটি তৈরি হয়েছে।
## একজন মাইনোরিটি নেতা পাওয়া গেলা না? কোনও মুসলমান নেই। দল এদের নিয়ে ভাবছে। কিন্তু রাজ্যে এর প্রতিনিধিত্ব কই। ১৯৫১ সালে জনসংঘের প্রথম মিটিং হয়েছিল গড়বেতায়। সেখানে সহসভাপতি ছিলেন আব্দুল আলি।
## বহু অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নেতাকে বলা হয়েছে তোমাদের এখন কাজ করা দরকার নেই। রাজ্যের সভাপতি তিনি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন আড়াই বছর। তার পরেই রাজ্যের যিনি সাধারণ সম্পাদক সংগঠন তাঁর রাজ্যে রাজনীতির ইতিহাস ২ বছর। আর লড়াই হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে। মমতাকে এখন গোটা দেশে মনে করা হয় একজন কুশলী রাজনীতিবিদ। আমাদের পছন্দ না হতে পারে। কিন্তু তথ্য তো অস্বীকার করা য়ায় না। মেসির টিমের সঙ্গে খেলতে নামব তিন দিন প্রাকটিস করে? গোটা রাজ্য়ের বিজেপি কর্মীরা ভালো নেই। তাদের উত্সাহ কে দেবে?