অনীক থেকে অ্যানি হয়ে সাত পাকে বাঁধা পড়লেন পুরনো বন্ধু সাগ্নিকের সঙ্গে! তারপর...

 দুবছর আগে যে অসম প্রেমের গল্প শুরু হয়েছিল, তারই ক্লাইম্যাক্স দেখল গোটা রাজ্য।

Updated By: Oct 29, 2018, 01:26 PM IST
অনীক থেকে অ্যানি হয়ে সাত পাকে বাঁধা পড়লেন পুরনো বন্ধু  সাগ্নিকের সঙ্গে! তারপর...

 নিজস্ব প্রতিবেদন: গল্পটা শুরু হয়েছিল বছর দুয়েক আগে। বিটেক পড়তে জলপাইড়ির  সাগ্নিক  এসেছিলেন কলকাতায়। আর মডেল হওয়ার স্বপ্ন দুচোখে নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন বালুরঘাটের অনীক। এক শ্রাবণ সন্ধ্যায় কলকাতাতেই দেখা হয়েছিল দুজনের। প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর প্রেম, ঘনিষ্ঠতা।  ‘সেক্স’এর সীমারেখা কখনই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি তাঁদের প্রেমের  মাঝে।  রবিবার   স্বর্ণালি সন্ধ্যায় চার হাত এক হল তাঁদের। পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে এক অনন্য সাক্ষী হয়ে থাকলেন সাগ্নিক, অনীক।

সানাই বাজল, ছাদনা তলায় সাত পাঁক ঘোরা হল, হল সিঁদুর দান-মালা বদল, মন্ত্রোচারিত  হল ‘যদিদং, হৃদয়ং তব…’   আর উলুধ্বনিতে  গাঁটছড়া বাঁধলেন অভিভাবকরা।  অতিথিরা  এলেন... কুলচা, কচি পাঁঠার ঝোল দিয়ে ফ্রায়েজ রাইস, রসগোল্লায়  পেটপুজোর পর প্রাণভরে আশীর্বাদ দিলেন নবদম্পতি। সঙ্গে এও বলেন, ‘‘ভাবিনি কখনও এমন বিয়ের সাক্ষী থাকব। নিজেকে অত্যন্ত গর্বিত মনে হচ্ছে। এত বড় মনের মানুষদের কাছাকাছি থাকতে পেরে। দেখবেন খুব সুখী হবে ওঁরা।’’

আরও পড়ুন: মোবাইল-প্রেমের গেরো, কিশোরের কপালে জুটল মায়ের থেকেও বয়সে বড় বউ

 দুবছর আগে যে অসম প্রেমের গল্প শুরু হয়েছিল, তারই ক্লাইম্যাক্স দেখল গোটা রাজ্য।  জলপাইগুড়ির  চকভৃগু এলাকার ২৩ বছরের সাগ্নিক  যখন কলকাতায় পড়তে গিয়ে রূপান্তরকারী অনীক তথা অ্যানির প্রেমে পড়েছিলেন, তখন ব্যাপারটা এতটাও সহজ ছিল না।  ‘একজন রূপান্তরকামীকে বিয়ে করবি! কী ভেবে এই সিদ্ধান্ত?’ বারবার এই প্রশ্নটারই সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাঁকে। পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়রা তো বটেই, পরিবারেরই অনেকের কাছে প্রথমটা গুঞ্জন শুনতে হয়েছিল! কিন্তু ছেলের সঙ্গে প্রথম থেকেই ছিলেন সাগ্নিকের  বাবা সুব্রত চক্রবর্তী। ছেলের ইচ্ছাকে সম্মান করেছিলেন তিনি।

রবিবার যখন চার হাত এক করলেন গর্বিত বাবাও বললেন, ‘‘ প্রথম থেকেই জানতাম আমার ছেলে কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নেয়নি। ও বরং অনেক সাহসী। নিজের মনের কথা বুক চিতিয়ে সকলের সামনে বলেছে। ওরা সুখী হবে না তো কে হবে!’’ নাতি-নাতবৌ-কে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেন সাগ্নিকের অশীতিপর ঠাকুমাও।  সাগ্নিকের মা বললেন, “ছেলের ঝোঁক কোনদিক, তা বুঝতে পেরে প্রথমটায় যে আহত হয়নি, তেমনটা নয়। তবে আমার সন্তানের সুখ তো আর আমার চেয়ে বেশি কেউ চাইবে না। তাই ওর ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিয়েছি।”

আর অ্যানি, মানে আসলে অনীক কী বললেন জানেন?

আরও পড়ুন: এমনই প্রেমের টান! কানাডার প্রাসাদ থেকে কালনার ছাউনির ঘরে ক্যাথরিন

দুচোখ ভরে আসা কাঁপা কন্ঠে অ্যানি শুধু বললেন, ‘‘খুব ভালোবাসি আমি ওকে। আর ও হয়তো তার থেকেও বেশি ভালোবাসে আমাকে। ছোটোবেলা থেকে এই স্বপ্নই দেখতাম! আজ সাগ্নিক তা সত্যি করল। আমরা ভালো ছিলাম, আগামী দিনেও থাকব। স্বেচ্ছায় নিজের টাকায় পুরুষ থেকে মহিলা হয়েছি। এই বার্তা দিতে চাই জাত ধর্ম লিঙ্গের ভেদাভেদ ভুলে সমাজে সমানভাবে  সবাইকে দেখা হোক।”

তাঁদের সিদ্ধান্ত যখন প্রথম কানে গিয়েছিল, তিনি স্তম্ভিত হয়েছিল।  আজ সেই অনীক তথা অ্যানির জ্যেঠাই বললেন, “বিধবা বিবাহ প্রথা প্রচলন করার সময়ে বিদ্যাসাগর নিজের ছেলের বিয়ে বিধবার সঙ্গে দিয়েছিলেন। সাগ্নিকের পরিবার আজ যা করল, তাতে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে অনেক কিছু শিখিয়ে দিল।” সাগ্নিক, অ্যানি এখন দুজনেই শিক্ষকতা করেন। সমাজ গড়ার কাজ শিক্ষকের হাতে। সাঘ্নিক ও অ্যানির এই প্রেমকাহিনী অনুপ্রেরণা আমাদের সকলের কাছে।

 

.