শ্রীখোলা: বৃষ্টি ভেজা বিকেল

একটানা বৃষ্টি। দার্জিলিঙে হোটেলের বারান্দা থেকে মেঘে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা। এবার বিদায় জানানোই যায়।

Updated By: Sep 27, 2012, 11:30 PM IST

একটানা বৃষ্টি। দার্জিলিঙে হোটেলের বারান্দা থেকে মেঘে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা। এবার বিদায় জানানোই যায়। ছাতা মাথায় পায়ে পায়ে জিপ স্ট্যান্ড। চেপেই বসাই যায় রিম্বিকের জিপে। কাছাকাছি বেশ কয়েকটি স্পট রয়েছে। কিন্তু নির্জনতার খোঁজে রিম্বিকই দ্য বেস্ট। শহরের কোলাহল ছেড়ে ঘুম পেরিয়ে মানেভঞ্জনের পথ। দ্রুত পেরিয়ে যায় সুখিয়াপোখরি, জোড়পোখরি। মানেভঞ্জনে সাময়িক চা পানের বিরতি। ফের একটানা উঠে যাওয়া। রাম্মাম জলবিদ্যুত্‍‍‍ কেন্দ্র ফেলে রিম্বিক। প্রাচীণ বানিজ্য পথ। এখন ফালুট ও দক্ষিণ সিকিমের বিভিন্ন গ্রামের প্রধান এন্ট্রি পয়েন্ট। ছোট্ট জনপদ। খান কয়েক হোটেল। পথের পাশে পুরনো পুলিস ফাঁড়ি। প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে যেতে হয়। সাপ্তাহিক হাটের দিন রিম্বিক অন্য চেহারা নেয়। রঙ বেরঙের পসরা নিয়ে দোকানিরা হাজির। রাস্তার ধারেই চলে বিকিকিনি। উল্টোদিকের চায়ের দোকানে গরম গরম পকোড়া ভাজা চলছে। নির্জন ছুটি কাটানোর আদর্শ পরিবেশ। শ্রীখোলা আরও দু কিলোমিটার। অনুরোধের ঢেকি গিলে কিছুটা পথ এগিয়ে দিতে রাজিও হয়ে যান জিপ চালকরা। শেষ এক কিলোমিটার হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। তবে চড়াই উত‍‍রাই নয়, পাহাড়ের গা বেয়ে সোজা পায়ে চলা পথ। তবে পথ কখন যে শেষ হয়ে যায় বোঝাই যায় না। গা ছমছম করা জঙ্গলের মধ্যে মিলিয়ে যায় পথ। এদিক-ওদিক পথ খোঁজার আগেই পাহাড়ি শিশুর দল হাত বাড়িয়ে লজেন্সের আবদার করে, বিনিময়ে পথও বাতলে দেয়। খোলা মানে পাহাড়ি ঝরনা। বর্ষায় তা ফুলে ফেঁপে একাকার। ওপরে ঝুলন্ত সেতু। সন্তর্পণে পা ফেলে ওপারে গেলেই আপনাকে স্বাগত জানাবে শ্রীখোলা। দোতলা ট্রেকার্স হাট আর একটু এগিয়ে একটি ছোট্ট হোটেল, এই নিয়ে একান্ত আপন শ্রীখোলা। ট্রেকার্স হাটের দোতলা থেকে অবিরাম শ্রীখোলার জলতরঙ্গ। কাঁচের জালনায় বৃষ্টির রেখাপাত। হঠাত্‍‍‍ আবছা হয়ে গেলেও জলের শব্দ যেন তার অস্তিত্ব সবসময় জাহির করে। হাটের কেয়ারটেকারেরই নিজস্ব হোটেল কয়েক পা দূরে। শুধু বলার অপেক্ষা। ধোঁয়া ওঠা কফির মগে হাল্কা চুমুক। সঙ্গে আর কী চাই। পূর্ণিমার রাতে শ্রীখোলার রূপ.....একবার না হয় পরখ করেই দেখা যাক।
যাওয়ার পথ: শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়িগামী যেকোন ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি। দল ভারী হলে সোজা জিপ ভাড়া করে রিম্বিক। না হলে দার্জিলিঙে গাড়ি পাল্টে শেয়ারের জিপে রিম্বিক। একদিন দার্জিলিঙে কাটিয়েও যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে সকাল সাতটার রিম্বিকের বাসও মিলবে দার্জিলিং বাসস্ট্যান্ড থেকে। ফিরতি পথে জিপের ব্যবস্থা আগেই করে রাখলে ভালো। রিম্বিক থেকে সকাল সাতটা ও দুপুর একটায় জিপ নিয়মিত চলে দার্জিলিং পর্যন্ত। বাকিরা অনিয়মিত। একটা রাত রিম্বিকে কাটিয়ে ফেরাই ভালো। হাঁটার পথে মাল বইবার জন্য খচ্চর বা পোর্টার পাওয়া যায়।
থাকার হদিশ:
দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের ট্রেকার্স হাট রয়েছে শ্রীখোলায়। কলকাতা ও দার্জিলিঙের অফিস থেকে অগ্রিম বুক করা যায়। না হলে স্পট বুকিংয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে। হাটে দ্বিশয্যার ঘর রয়েছে দুটি। বাকি ঘরগুলিতে ডর্মিটরি। কেয়ারটেকারের হোটেলেও রাত্রিবাসের ঘর মেলে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন তবে কমন বাথরুম। আর শ্রীখোলার ওপর সেতু পেরনোর আগেই পথের ধারে গড়ে উঠেছে নতুন একটি হোটেল। দ্বিশয্যা ঘরের ভাড়া পাঁচশো টাকার কাছাকাছি। ডর্মিটরিরও ব্যবস্থা আছে। হোটেল মালকিনই নিজের হাতে রান্না করে অতিথিসেবা করেন। রিম্বিকে তিন-চারটি ভালো মানের হোটেল রয়েছে।

.